চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, রাজা-বর্ষা শুয়ে আছে দুই খাঁচায়। কারো প্রতি কারো যেন কোনো অনুভূতি নেই।
মাঝখানে লোহার গ্রিলের প্রতিরোধ দেয়াল দিয়ে খাঁচাটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দৌড়ানো বা চলাফেরার তেমন জায়গা না থাকায় সারাক্ষণ শুয়ে-বসে থাকে তারা। ফলে চর্বি জমে গেছে এ সিংহ দম্পতির শরীরে। প্রতিদিন ১২ কেজি করে গরুর মাংস খাওয়া সিংহ-সিংহীর আনুমানিক ওজন এখন তিন মণ করে। তবে এ দিন খাঁচার ভেতর মাংস থাকলেও খাবারের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না এই দম্পতির। এদিকে সিংহ দু’টি নিঃসন্তান থাকার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিংহের গড় আয়ু সাধারণত ১৫ থেকে ২০ বছর। সে হিসেবে রাজা-বর্ষা দম্পতির গড় আয়ু শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এছাড়া রাজার রুগ্নতাও সন্তানহীনতার জন্য দায়ী বলে মনে করেন চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. জসিম উদ্দীন।
রংপুরের অন্যতম এ বিনোদন স্পটে প্রতিদিনই হাজারো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানার এই অবস্থার জন্য পরিচর্যাহীনতাই দায়ী বলে মনে করেন।
চিড়িয়াখানায় সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় ও রংপুর ডিভিশনাল কোচ আলীম আল সাইদ খোকন অভিযোগ করেন, যথাযথ পরিচর্যার অভাবে রাজা-বর্ষা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারা পরিমাণ মতো খাবার না পেয়ে ক্রমশই দুর্বল হচ্ছে। অনেক সময় সঠিক পরিচর্যা না করায় তাদের শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।
রংপুর চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. জসিম উদ্দীন বলেন, আনুমানিক ১৫০ বর্গফুটের খাঁচাটি সিংহ দু’টির জন্য যথেষ্ট। এছাড়া প্রতিদিন গরু জবাই করে রাজা-বর্ষাকে তাজা মাংস খাওয়ানো হয়। কখনো ফ্রিজের ঠাণ্ডা মাংস খেতে দেওয়া হয় না। মাঝে মধ্যেই জীবানুনাশক দিয়ে ওদের ঘর পরিষ্কার করা হয়। যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় এজন্য নিয়মিত শ্যাম্পু দিয়ে তাদের গোসল করানো হয়। তবে ১৫০ বর্গফুটের একটি খাঁচা কোনভাবেই দু’টি সিংহের জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানান রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোকছেদ আলী।
তিনি বলেন, সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য একটি সিংহের ন্যূনতম ২১৫ বর্গফুট জায়গা দরকার। তা না হলে সিংহটি স্বাভাবিক পশুসুলভ আচরণ করবে না। নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করবে না। প্রজনন ক্ষমতা হারাতে পারে এবং তার আয়ুও কমে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
আরআর/এসএইচ