ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মোটর শ্রমিক থেকে ‘মজমা’ হেকিম, কাঁচা গাছেই চিকিৎসা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
 মোটর শ্রমিক থেকে ‘মজমা’ হেকিম, কাঁচা গাছেই চিকিৎসা! মোটর শ্রমিক থেকে ‘মজমা’ হেকিম


জুড়ী (মৌলভীবাজার) থেকে: পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছের পরিণাম বর্ণনাকারীর কণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ানো।

জুড়ী বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে বসে বেশ আসর জমিয়েছেন ছোটখাটো এক ব্যক্তি। মুখে হালকা দাড়ি।

তিনটি বাঁশের চটা ত্রিকোণাকৃতিতে দাঁড় করিয়ে মাঝখানে চার্জার টর্চ ঝুলিয়ে ‘মজমা’ জমিয়েছেন তিনি।

রাত ৯টায়ও তাকে ঘিরে জটলা। কারও মুখে রা নেই, সবাই শোনায় মনোযোগী। ঘটনা কী! ইউক্যালিপটাস গাছ না লাগাতে উৎসাহিত করে এলেন গাছকে, মাটিকে সম্মান করার প্রসঙ্গে। গাছের ওপর প্রস্রাব করাকেও ভালোভাবে নেন না মোটেই। পাতা ছেঁড়া তার কাছে বড় অপরাধ। এসব শুনে আগ্রহ থেকেই দাঁড়ানো।  মোটর শ্রমিক থেকে ‘মজমা’ হেকিম, কাঁচা গাছেই চিকিৎসা!

বিক্রির চেয়ে ফ্রিতে সবাইকে বিভিন্ন গাছ কাঁচা খাইয়ে পরীক্ষা করাতেই ব্যস্ত। তবে যষ্ঠিমধুর কদর বেশি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোর শাহজাদা জানালো, এই হেকিমের নাম ফুল মিয়া। দিন পনেরো হলো এ কাজ শুরু করেছেন তিনি। সে নিজেও প্রতিদিন আসে শুধু এই যষ্ঠিমধু খেতে।

 

একটু পরেই ফুল মিয়া শুরু করলেন, ‘এই গাছ হাতে বান্ধিলে সাপ ধারে কাছে আইবো না। গ্যারান্টি, এইটা খাইলে রক্ত আমাশয় দূর হইবো। বাবা-মায়ের পায়ে ব্যথা হইলে এইটা লইয়া যান’…..ইত্যাদি ইত্যাদি।

শিমুল মূল, স্বর্ণলতা, লজ্জাবতী, মুরছালিন, রামকলাসহ বিভিন্ন ফল, লতা, গুল্ম দেখিয়ে তার গুণাগুণ বলছিলেন। কখনো আবার গুণ বর্ণনায় ব্যবহার করছিলেন সাংকেতিক ভাষা। সামনে সাজানো বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছড়া। পাশে বসে ১০ টাকার যষ্ঠিমধু চাইতেই দিলেন বেশ অনেকটা। তবে টাকা নিতে চাইলেন না কিছুতেই। যদিও বারবারই বলছিলেন, যে যা খুশি হয়ে দেয়, তাই নেন।

এবার বেশ আন্তরিক হলেন। বললেন, ‘গাছ ভালোবাসি, বাবা-মা নামও রাখছিলেন ফুল মিয়া। আমার সব গাছ পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা। কাঁচা গাছ। আমি কাঁচা গাছে চিকিৎসা করি। নিজে আগে খাই, তারপর অন্যকে খাওয়াই’। জানালেন, একমাসও হয়নি এ কাজ শুরু করেছেন। পকেটে মোবাইল ফোন বেজে উঠলে ধরে বললেন, ‘আমি তো মজমা জমাইয়া বসিয়া রইছি’।

কতোদিন এ পেশায় জানতে চাইলে বলেন, ‘মাস পোরেনি এখনও। আগে মোটর শ্রমিক ছিলাম, চকলেটও বিক্রি করছি। আমার গুরু শরবত বিক্রেতা সেলিমের কাছ থেকে এটা শিখছি। বইও আছে আমার কাছে। চাইলে দেখতে পারেন। আমি নিজে জুড়ী-বড়লেখার পাহাড় ঘুরে গাছ সংগ্রহ করি। জঙ্গলে বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের ভয় থাকে। রিকশা ভাড়া ছাড়া কোনো খরচ নেই আমার।  তাই মানুষরে বেশি ফ্রি খাওয়াই। বাড়ি এখান থেকে ১৩ টাকা ভাড়া। বেশি চাহিদা নেই। গাছের জন্য আমি সাধনা করি’।

হঠাৎ হেকিমি কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘জীবনে বহু পরিশ্রমের কাজ করছি, চুরি-ডাকতি তো করিনি। ভেতরে ভেতরে গাছের প্রতি ভালোবাসা ছিলো। এখন এইটারেও পেশা হিসেবে নিয়ে দেখতে চাই। আমার কাছে কোনো শুকনো শিকড়-গাছ নেই। সব কাঁচা। এটাই আমার মধ্যে অন্যদের চেয়ে পার্থক্য’।

উদ্দেশ্য যাই হোক, গাছড়া ওষুধে কাজ যতোটুকুই হোক, তার মধ্যে গাছ নিয়ে সচেতনতা আছে। এবং সেটাকে আগে বিক্রি করে তবেই তিনি বিক্রি করেন তার গাছড়া ওষুধ। এটাই বা ক’জন করেন!

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
এএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ