ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পনের ভাগ টাকা যোগ করে ওষুধ বিক্রি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
পনের ভাগ টাকা যোগ করে ওষুধ বিক্রি! পনের ভাগ টাকা যোগ করে ওষুধ বিক্রি!

শেরপুর (বগুড়া) ঘুরে: ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ জাতীয় ওষুধ ক্রয় মূল্যের সঙ্গে শতকরা পনের ভাগ টাকা যোগ করে বিক্রি করতে হবে। এমআরপি রেটে ওষুধ বিক্রির শর্ত ভঙ্গ করলে একদিন দোকান বন্ধ থাকবে। নগদ দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির বগুড়ার শেরপুর উপজেলা শাখার সদস্যদের ওষুধ বিক্রিতে এমআরপি রেট বাস্তবায়নে এসব আইন মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওষুধ ব্যবসায়ীদের প্রতি এ রকম ১৬টি শর্তাবলী অত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি মোকারিম হোসেন (রবি) ও সাধারণ সম্পাদক শেখর লাল কুণ্ডু (লুদু) জারি করেছেন।


 
তারা এখানেই ক্ষ্যান্ত হননি। এসব শর্তাবলী মানতে জারি করেছেন লিখিত আদেশ। ব্যত্যয় ঘটলেই দোকান বন্ধ, অর্থদণ্ডসহ নানা ধরনের শাস্তির মুখোমুখি করা হচ্ছে ওষুধ ব্যবসায়ীদের। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা।
 
তবে সমিতির আওতাভুক্ত লাইসেন্সধারি ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে কোনো কিছু বলতে চাচ্ছে না। কেন না সমিতির শর্তাবলী লঙ্ঘন করলে কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের কাছে ওষুধ বিক্রি করবেন না। যদি কেউ ওষুধ দেয় তবে সমপরিমাণ মূল্যের দ্বিগুণ ওষুধ এমআরপি বাস্তবায়ন কমিটি বায়েজাপ্ত করবে।
 
এসব শর্তাবলী লিখে সমিতির পক্ষ থেকে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। পোস্টারগুলো শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন ওষুধ দোকানের দেয়ালে দেয়ালে সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমিতির নেওয়া হঠকারি এসব আদেশ মানতে গিয়ে প্রায়ই ওষুধ ব্যবসায়ীরা চেনা-অচেনা অনেক ক্রেতা সাধারণের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
 
এমআরপি রেট বাস্তবায়নের নামে অদ্ভুত শর্তাবলীর ফাঁদে আটকে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতারা ওষুধ ব্যবসায়ীদের ক্রেতা সাধারণের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের বাড়তি টাকা নিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
ওষুধ ব্যবসায়ীরা এমআরপি রেটে ওষুধ বিক্রি না করলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করছেন অত্র সমিতির নেতারা। আইন না মানার অপরাধে ইচ্ছে মতো অর্থদণ্ড করা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা জানার পরও সমিতিরি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো সমিতির নেতারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
 
ওষুধ ব্যবসায়ী সাজু বাংলানিউজকে জানান, অনেক পরিচিত ক্রেতা দোকানে আসেন। নিয়মিত ওষুধ কেনার কারণে তারা অনেক ওষুধের দাম জানেন। তাদের কাছে এমআরপি রেট চাইলে বিপত্তি বাধে। তখন আর কিছুই করার থাকে না। আগের দামেই ওষুধ বিক্রি করতে হয়। এ কারণে তাকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে সমিতিরি নেতাদের। দু’দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে।
 
একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, সমিতির নেতারা শহর ও গ্রামের কিছু কিছু ব্যবসায়ীকে বাড়তি সুবিধা দিয়ে নিজেদের হাত করে নিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় তারা দালাল নিযুক্ত করেছেন। এসব ব্যক্তিরাই নেতাদের খবর দিয়ে থাকেন। খবর পেয়ে সেসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালান। সাক্ষী প্রমাণ ছাড়াই জরিমানা আদায় করেন।  
 
শেরপুর নারগিক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজিত বসাক বাংলানিউজকে জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে ওষুধ ব্যবসায় আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো সাড়া দেননি তারা।
 
তবে সমিতির নেতারা তাদের হঠকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। প্রয়োজনে জন সাধারণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামা হবে বলেও যোগ করে সুজিত বসাক।

উপজেলা কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখর লাল কুণ্ডু বাংলানিউজকে জানান, ওষুধ বিক্রিতে এমআরপি রেট বাস্তবায়নের স্বার্থে এসব নিয়ম করা হয়েছে। এটা মানানো গেলে ব্যবসায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না। সবাই লাভবান হবেন। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধ হওয়ার তো কোনো কারণ দেখি না। এক্ষেত্রে অন্যদের নাক না গলানোয় ভালো পরামর্শ দেন এ নেতা।
 
জেলা ড্রাগ সুপার আহসান হাবিব বাংলানিউজকে জানান, অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া অন্য বিষয়গুলো দেখা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলেও যোগ করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
এমবিএইচ/আরবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।