তীব্র গরমে সপ্তাহ ধরে ধামরাইতে এমন অনুভূতি নিয়েই বাড়ি ফিরেছে অসংখ্য মানুষ। নিষ্ঠূরতা আর অমানবিকতার বিপরীতে মানুষ সম্পর্কে ধারণার জায়গাটা যেন একটু একটু করে পাল্টে যাচ্ছে তাদের মনে।
অস্বস্তির তীব্র গরমে ধামরাইতে পথচারীদের হাতে শরবতের গ্লাস তুলে দিয়ে এমন অনুভূতিই কুড়োচ্ছেন গৃহবধূ মানসী বণিক মৌ (২৮)।
প্রতিদিনই নিজ হাতে বরফগলা জলে শরবত বানিয়ে তিন থেকে চার’শ পথচারীর হাতে তুলে দিয়ে মানবতার অনন্য নজির গড়েছেন মানসী।
ধামরাইয়ের যাত্রাবাড়ি এলাকায় সুকান্ত বণিকের স্ত্রী মানসী বণিক মৌ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পেইন্টিং-এ মাস্টার্স শেষ করে এখন পুরোদস্তুর ঘরকন্নার কাজ নিয়েই ব্যস্ত। অবসর সময়ে ডুব দেন নিজের স্টুডিওতে।
রঙতুলির আচঁড়ে ক্যানভাসে ফোটান নিজের সৃজনশীলতা।
সেই মানুষটি হঠাৎ করেই কেনইবা তপ্ত গরমে শতশত পথচারীর মুখে তুলে দিতে গেলেন শীতলতার এই পরশ?
‘ক’দিন ধরেই বেশ গরম। প্রাণ ওষ্ঠাগত। বাড়ির দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। এসময় দেখলাম বেশ বয়স্ক একজন রিক্সাচালক রিক্সা চালাচ্ছেন আর গা দিয়ে বের হওয়া ঘামে তার শার্ট ভিজে একাকার। মুখটাও বিবর্ণ। এই দৃশ্য দেখে মায়া হলো। উনাকে থামালাম। দ্রুত ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে লেবু আর গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে তুলে দিলাম তার হাতে। ’
‘তারপর তার প্রশান্তিময় হাসি মনে এমন অনুভূতি তৈরি করলো যা আর ভাষায় প্রকাশের নয়। তখনই মনে হলো, আহা, এভাবে যদি আরো আরো মানুষের হাতে শরবত তুলে দিতে পারি। যেই ভাবা সেই কাজ। স্বামী সুকান্ত বণিককে ভাবনার কথা জানাতে সেও মহাখুশি। শুরু হলো আমাদের মিশন। ’
সকাল হতে না হতেই বাজার থেকে লেবু গুড় আর বরফ সংগ্রহ করে শুরু হয় শরবত আর স্যালাইন বানানো। তারপর সুকান্ত নিজেই রাস্তায় নেমে পরিবেশন করে পথচারীদের। এখন মহা উৎসাহে আমার ছোট্ট ছেলে সৌগত বণিকও (১০) বাবার সাথে নেমেছে এই কাজে। ’
বাংলানিউজকে এভাবেই নিজের কথা বলছিলেন মানসী বণিক মৌ।
মানসী বলছিলেন, ‘রোজা শুরুর আগ পর্যন্ত আমি এভাবেই পথচারীদের হাতে শরবত তুলে দেব। বিশ্বাস করুন আমার দেখাদেখি ঢাকাতে আমার এক বন্ধু এমন কাজ শুরু করেছে। এটা জেনে কী যে আনন্দ লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতোন না!
গত ক’দিন ধরেই ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসবের স্থানটির সামনের সড়কে পথচারীরা প্রচণ্ড গরমে এভাবেই তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন মানসীর মমতামাখানো শরবতে।
আর একথা এখন মানুষের মুখে মুখে।
মানসী জানান,তীব্র গরমে তপ্ত রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন। প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণা। কিন্তু কোথাও তো টিউবওয়েল বা কলের পানির ব্যবস্থা নেই। এই গরমে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন হিট স্ট্রোকে। কেউ বা ভুগছেন পানিশূন্যতায়।
রাস্তার ভিখিরি থেকে মাছবিক্রেতা বা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী সবাই এখন মুগ্ধ মানসীর শববতে।
‘আহা মানুষ এখনো এমন দরদী, মানবিক”- এমন মন্তব্য শুনে সত্যিই মনটা ভরে ওঠে। তাদের দোয়া আর ভালোবাসাই যেন আমাকে আরো উৎসাহ দেয়।
সামান্য কাজ করে কতোটা যে অসামান্য হওয়া যায়- তার প্রমাণ দিলেন ধামরাইয়ের গৃহবধূ মানসী।
এই কাঠফাটা গরমে শীতলতার পরশে ধামরাইয়ের পথিকরা এখন প্রশান্তির হাসি নিয়েই ফিরছেন নিজ গন্তব্যে। সামান্য শরবতই মানবিকতার এক শান্তিময় ছায়া বিছিয়ে দিচ্ছে হাজারো প্রাণে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
ওএইচ/জেএম