ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরানো হলো সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
সরানো হলো সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য ভাস্কর্য সরানোর দৃশ্য

ঢাকা: অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নারীর আদলে গড়া ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজ সম্পন্ন হলো। শুক্রবার  ভোররাত ( বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) সাড়ে ৪টায় গণজাগরণ মঞ্চ ও ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও ভাস্কর্যশিল্পী মৃণাল হকের উপস্থিতির মধ্যেই অপসারণের কাজটি হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাত সুপ্রিম কোর্টের সামনে কংক্রিটের গোড়ায় হাতুড়ি ও শাবল চালিয়ে কয়েকজন  শ্রমিক ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ শুরু করেন। কাজটি অত্যন্ত গোপনে শুরু করা হয় বিধায় সংবাদমাধ্যম তা জানতে পারে মধ্যরাতের দিকে।



ভাস্কর্যটির নির্মাতা ভাস্কর মৃণাল হক  সেখানে ছুটে যান। সাংবাদিকদের কাছে এ সময় তিনি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।

বেদনাহত মৃণাল হকমৃণাল হক ভাস্কর্য সরানোর দৃশ্যটি দেখে আবেগকাতর কণ্ঠে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমার কিছু বলার নাই। আমাকে সরাতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যরা ভাঙলে তো পুরোই ভাংচুর করতো। ক্ষতি হতো। এটা মনে হয় অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের (সুপ্রিম কোর্টের নতুন ভবন)সামনে নেওয়া হতে পারে। আমি বলতে পারি না।
এর আগে তার তৈরি করা লালনের ভাস্কর্য অপসারণের প্রসঙ্গেও কথা বলছিলেন মৃণাল হক। তার ভাষায়, এটা দু:খজনক।

এ সময় তার কণ্ঠ ছিল আবেগঘন। চোখ অশ্রুসজল।

অশ্রসজল মৃণাল হক তাকিয়ে দেখছেন তার ভাস্কর্য সরানোর দৃশ্যকান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শান্তিরক্ষার স্বার্থে কিছু ত্যাগ করতে হয়। গতকাল সরানোর ব্যাপারে আমাকে বলা হয়েছে। আমি আমেরিকায় ছিলাম্ ভালো ছিলাম। কিন্তু দেশকে ভালোবেসে এসে ২৫টির মতো ভাস্কর্য করেছি। অনেকে অনেক কথা বলে। কেউ কিন্তু এগিয়ে আসে না। আমার হাত পা বাঁধা। তাই আমি কিছু করতে পারছি না। অনেক কষ্টে এটা করেছি। তাই মেনে নিতে পারছি না।

ভাস্কর্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা গ্রিক দেবীর র্মূর্তি নয়। এটা শাড়িপরা একটা বাঙালি মেয়ে। এটা গ্রিক দেবীর সঙ্গে যায় না।

২০১৬ সালে ভাস্কর্যটির নকশা করেন ভাস্কর মৃণাল হক। পরে ১৮ ডিসেম্বর এটি স্থাপন করা হয়। এছাড়া গত ২৪ ডিসেম্বর বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৬ এর মূল মঞ্চের দু’পাশে এর রকম দুটি ভাস্কর্য বসানো হয়েছিলো।

কিন্তু এটাকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না করা হলেও হেফাজতে ইসলাম সরানোর জন্য দাবি করে আসছিল। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতেও তারা এটি সরনোর দাবি তোলেন তারা। পরে প্রধানমন্ত্রীও তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

এরপর ২৫ এপ্রিল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনটা কিন্তু প্রধান বিচারপতির। এখানে ভাস্কর্য যখন লাগানো হয়েছিলো তখনো আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আর এই ভাস্কর্য ওঠানোর ব্যাপারেও তাঁর (প্রধান বিচারপতি) সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু আমি এটুকু বুঝি যে এই ভাস্কর্য প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে কিছু দ্বিধা দ্বন্দ্ব উঠেছে। ’

আনিসুল হক আরও বলেন,‘এই সুপ্রিম কোর্টটা অত্যন্ত পবিত্র স্থান। এটা যেন কোনোভাবেই কলুষিত না হয়, এখানে যাতে কোনো রকম অরাজকতা না হয়। সেটা সকলের বিবেচনা করা উচিত। ’

‘ভাস্কর্য স্থাপনে কি কলুষিত হয়েছে?’-- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সেটা বল ছিনা। প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে। এটা কিন্তু প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। সে কারণে আপনারা বোঝেন আমি কি বলেছি। ’

ঠিক এর একমাস পরে এসে ২৫ মে দিবাগত রাতে (শুক্রবার ভোর রাতে)এটি সরানো হলো।

এদিকে রাতে  অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেন।   তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবীসহ অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকে ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে সবার মতামত জানতে চান। তখন সংশ্লিষ্ট সবাই ভাস্কর্যটি সরানোর ব্যাপারে ইতিবাচক অভিমত দেন।

এ ব্যাপারে তাদের যুক্তি ছিল, সম্ভাব্য  অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য ভাস্কর্যটি সরানো দরকার। সুপ্রিম কোর্টের উর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে মধ্যরাতে মোবাইল ফোনে কল করেও মন্তব্যের জন্য পাওয়া যায়নি।

গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ

ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টের সামনের রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করছে গণজাগরণ মঞ্চ । এ সময় তারা 'জয়বাংলা' সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়। রাত তিনটার দিকে পুলিশের একটি দল সেখানে হাজির হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে এই ভাস্কর্যটি স্থাপনের পর থেকেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে। এমনকি প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে হেফাজত। ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরানোর দাবির পেছনে হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামী গোষ্ঠির অন্যতম যুক্তি ছিল ভাস্কর্যটি জাতীয় ঈদগাহ ময়দান থেকে দৃশ্যমান।  

বাংলাদেশ সময়:০৪৪০ ঘণ্টা, মে ২৬,২০১৭/আপডেট

ইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad