ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পথে-ঘাটে পানি খাচ্ছি, বিশুদ্ধ তো?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
পথে-ঘাটে পানি খাচ্ছি, বিশুদ্ধ তো? রাস্তার ধারের দোকানে বিশুদ্ধ বলে বিক্রি হচ্ছে জারের পানি

ঢাকা:  চায়ের স্টল, হোটেল বা রাস্তার ধারের শরবতের দোকান সবখানেই বিশুদ্ধ বলে বিক্রি হচ্ছে নীল জারভর্তি পানি। গরমে অতীষ্ঠ, পিপাসার্ত মানুষ বাছবিচার না করেই দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায় পান  করছে এ পানি। ফিল্টারের পানি বলে বিক্রি করা হলেও নীল জারের এ পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয। এতে বিশুদ্ধ পানির নামে বিক্রি করা এই পানির মাধ্যমে ভোক্তারা একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, সেইসঙ্গে পড়ছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

 

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই)-র মতে,  প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার জার পানির চাহিদা রয়েছে রাজধানীতে। এমন চাহিদাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ কারখানা।

কারখানাগুলোতে নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা পানি শোধনের ব্যবস্থা। ফলে সরাসরি নোংরা দুষিত পানি জারে ভরেই ভোক্তার কাছবরাবর পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এসব জারভর্তি পানি যাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস-আদালত এমনকি বাসাবাড়িতেও।

এমন শ্যাওলাপড়া  জারের পানি বিক্রি হচ্ছে সর্বত্রবিএসটিআই ও মহানগর পুলিশের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সময়ে অবৈধ পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও  খুচরা বাজারে অভিযান চালায়। এসময় মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছাড়াই পানি বিক্রি করার দায়ে তাৎক্ষণিক জেল-জরিমানাও করা হয়। তবু এ‌তে অসাধু ব্যবসায়ীদের পানি ব্যবসায় কোনো ধরনের প্রভাবই পরে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর-১, মিরপুর-১০, আজিমপুর, পল্লবী, জুরাইন,উত্তরা,রামপুরা, উত্তরখান, দক্ষিণখানসহ বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য পানির কারখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়া কয়েকটি  জার কিনে অনেকেই বাসাবাড়িতেই পানির ব্যবসায় নেমে পড়েছে। এদের পানির প্রধান উৎস ঢাকা ওয়াসার চোরাই লাইন ও সাপ্লাইয়ের পানি।

ব্যবসায়ীরা প্রথমে বড় ট্যাংক থেকে পাইপের সাহায্যে ওয়াসার পানি ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নীল রঙের জারগুলোতে ভরে। তারপর ফিটকিরি অথবা ট্যাবলেট মিশিয়ে পানিকে দুর্গন্ধমুক্ত করা হয়। এরপর ট্যাগ না করে প্লাস্টিকের তৈরি মুখ দিয়ে জারের মুখ আটকানো হয়। পরে ভ্যানগাড়ি ও পিকআপে করে হোটেল ও চায়ের দোকান ও রাস্তার ধারের শরবতের দোকানে সরবরাহ কর‍া হয়।

এভাবে এক জার পানির পেছনে খরচ পড়ে ৮ থেকে ১০ টাকা। কিন্তু ক্রেতার কাছে প্রতি জার পানি বিক্রি করা হয় ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রচুর লাভ হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের জরিমানা সত্ত্বেও কিছুদিন পর আবারও ব্যবসায় নামে বিক্রেতারা।

বিএসটিআইয়ের সহকারি পরিচালক মো.রেজাউল হক বাংলানিউজকে বলেন, বিএসটিআয়ের অনুমোদনহীন অধিকাংশ পানির কারখানা গড়ে উঠেছে রাস্তার পাশে নোংরা এবং ঘিঞ্জি বসতিপূর্ণ এলাকায়। কারখানাগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরিসহ প্রয়োজনীয় কোনো যন্ত্রপাতি নেই। পানি রাখার জন্য যে জারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো শেওলাপড়া, দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয় না। বিএসটিআই ও কোম্পানির লোগো নেই, উৎপাদন ও মেয়াদ পেরোনোর তারিখও থাকে না।

তিনি বলেন, ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে আমরা নিয়মিত পানির অবৈধ ব্যবসা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।

মিরপুর-১০ শাহ আলী মার্কেটের পিছনে গলি মধ্যে অল্প জায়গায় গড়ে উঠেছে অরা পিউটিড ড্রিকিং ওয়াটার নামের কারখানা। এখান থেকে ফার্মগেট, মিরপুর-১০সহ  বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়।

কারখানাটির মালিক আনিসুর রহমান পাপ্পু বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, তার কারখানা বিএসটিআই ‍অনুমোদিত। তবে তার কারখানায় প্রবেশ করতে চাইলে তিনি বাধা দেন।

ঢামেকের সহকারি অধ্যাপক ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব বাংলানিউজকে বলেন, পানি মানবশরীরের সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান। মানহীন পানিতে প্রয়োজনীয় আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে না। আর দূষিত পানির কারণে আমাশয়, জন্ডিস, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক, টাইফয়েড, কলেরা, চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। দীর্ঘদিন  এমন পানি পানের ফেলে জটিল রোগও হতে পারে। এ কারণে পানি পানে সবার সচেতন থাকা প্রয়োজন।

 বাংলাদেশ সময়:১০২৯ ঘণ্ন্টা, মে ২৫,২০১৭

এমসি/জেএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।