ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ক্ষুদে সাঁতারুরা বিশ্বমানের তারকা হবে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
ক্ষুদে সাঁতারুরা বিশ্বমানের তারকা হবে: প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদে এক সাঁতারুর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী/ছবি: ডিআইডি

ঢাকা: বাংলাদেশের ক্ষুদে সাঁতারুদের নৈপুণ্যে অভিভূত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একদিন বাংলাদেশের সাঁতারুরা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সেরা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে নৌবাহিনীর সদর দপ্তরের সুইমিংপুল কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ শীর্ষক সমাপনী অনুষ্ঠানে এ আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে সাঁতার অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সাঁতার খেলাটিও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

তারই নিদর্শন আজকের এ প্রতিযোগিতায় ক্ষুদে সাঁতারুদের মেধার প্রতিফলন।

তিনি বলেন, এখানে ক্ষুদে সাঁতারুদের যে নৈপুণ্য দেখলাম- তাতে আমি অত্যন্ত আশাবাদী। এখান থেকেই একদিন আমাদের বিশ্বমানের প্রতিযোগীরা উঠে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বাংলাদেশেরই মানুষ ব্রজেন দাস ইংলিশ চ্যানেল পার হয়েছিলেন। কাজেই আমরা যে পারি সেটা আসলে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ শীর্ষক সুইমার ট্যালেন্ট হান্ট-এ নতুন প্রজন্মের দক্ষ সাঁতারুদের সমাবেশ ঘটেছে।

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাঁতারুরা অংশগ্রহণ করে পদক নিয়ে আসছে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছেন। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত ১২তম এস এ গেমস-এ মাহফুজা খাতুন সাঁতারে মহিলাদের ১০০ মিটার ও ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে ২টি স্বর্ণ পদক জিতেছেন। এছাড়াও এই গেমস-এ আরও মোট ১৭টি পদক অর্জন করে আমাদের খেলোয়াড়রা বিদেশের মাটিতে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় আমাদের সাঁতারুরা ২টি স্বর্ণ, ২টি রৌপ্যসহ ৯টি পদক পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।

শুধু অর্থনীতি নয় খেলাধুলার মাধ্যমেও বিশ্ব দরবারের বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

গতরাতে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশের ওয়ানডে  র‌্যাংকিংয়ে ৬ নম্বরে উঠে আসায় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ একদিন ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জয় করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

খেলাধুলার প্রসারে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু এবং তার নিজের দাদা শেখ লুৎফর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

স্কুল পর্যায় থেকে ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী করতে সরকারের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি গোল্ডকাপ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুনার্মেন্ট আয়োজনের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

খেলাধুলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, খেলাধূলার মধ্য দিয়ে আমি মনে করি একদিকে যেমন আমাদের ছেলে-মেয়েরা শারিরীকভাবে সুগঠিত হবে এবং অন্যদিকে মনের দিক থেকে উদার হবে, মানসিক শক্তি পাবে। তাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাস জেগে উঠবে।

তিনি বলেন, লেখাপড়া শিখতে হবে, লেখাপড়ার সাথে সাথে খেলাধ‍ুলাকেও আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে।

এ সময় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মধ্যে লুকানো মেধাকে খুঁজে কের করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বক্তব্যের শুরুতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। জাতির পিতা কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করে বলেন, আমাদের ঐক্যের প্রতীক ‘জয় বাংলা শ্লোগানটি তার একটি কবিতা থেকে নেওয়া।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বয়সভিত্তিক শ্রেষ্ঠ ৮ জন ক্রীড়াবিদদের প্রত্যেককে খেলাধ‍ুলায় আরু উন্নতি সাধনের জন্য ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নৌবাহিনী সদর দপ্তরে সুইমিং পুল কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সমাপনী দিনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন নির্বাচিত সেরা সাঁতারুরা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিভাবান সাঁতারুদের খুঁজে বের করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশেনের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ২০১৬ সালের ১৯ মে ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

প্রথম পর্বে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ও ৪৮৯ টি উপজেলা থেকে ২৫ হাজার সাতারু অংশ নেয়। এদের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের জন্য ১২৭৫ জন নির্বাচিত হয়। পরবর্তীতে ১২৭৫ জনকে ঢাকায় এনে পুনরায় তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১৬০ জনকে নির্বাচিত করা হয়।

শেষ পর্বে বাংলাদেশে সুইমিং ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে এই সাঁতারুদের ৩ মাস নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হয় সেরা ৬০ জন সাঁতারু। এই কৃতী সাঁতারুদের জন্য লেখাপড়াসহ দেশে বিদেশে ৩ বছর ব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

অন‍ুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুইমিং ফেডারেশনের সভাপতি ও নৌবাহনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাঈফ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।