ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

গ্রামে গ্রামে পেয়ারা বাগান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
গ্রামে গ্রামে পেয়ারা বাগান নাচোলের পেয়ারা বাগান। ছবি: ইকরাম-উদ দৌলা

নাচোল থেকে: আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ছে পেয়ারা বাগানও। বছর ঘুরতেই লাখ টাকা আয়ের পথ খোলায় অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন বাংলার আপেলখ্যাত এ ফল চাষে।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নাচোলেই চাষ হচ্ছে পেয়ারা। নিজ জমি তো বটেই, অনেকেই অন্যের জমি লিজ নিয়েও এ ফল আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।

এ নিয়ে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নার্সারিও। যেখানে থাই পেয়ারা ও কাজী পেয়ারার চারা উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় ‘টেপ’ পদ্ধতিতে কলমও করা হচ্ছে। টেপ পদ্ধতি বলতে চাষিরা বলছেন, উন্নত জাতের পেয়ারা গাছের ডাল দেশিয় প্রজাতির গাছে লাগিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার প্রক্রিয়া। তবে সবেচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে থাই ও কাজী পেয়ারা।

নাচোল থেকে গোমস্তাপুর যেতে রাস্তার দু’পাশে অনেকেই বিস্তীর্ণ মাঠে পেয়ারা বাগান করেছেন। এর মাঝে আবার আমের চারাও লাগিয়েছেন।

চাষিরা বলছেন, ১০ বিঘা জমিতে চারা রোপন করলে বছর ঘুরতেই ফল আসে। এতে ৫ লাখ টাকার মতো পেয়ারা হয়। খরচ বাদে লাভ থাকে দেড় লাখ টাকার মতো। আর দ্বিতীয় বছরে সাড়ে আট থেকে নয় লাখ টাকার ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছরে ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হয়। সবচে’ বেশি লাভ হয় তৃতীয় বছরে। তবে এ সময় গাছ মরে যেতে থাকে।

মাঝে মাঝে লাগানো আমের চারাও বেড়ে উঠতে থাকে। এতে ফলনে কোনো ক্ষতি হয় না। কেননা, আম আসতে শুরু করে পাঁচ বছর থেকে। অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বছরেও কিছু কিছু গাছে আম আসে।

নাচোলের শিবপুর, চপখড়িয়া, কাজলা, কালহর, চিনিয়াতলাসহ বিভিন্ন গ্রামের ফল চাষিরা বলছেন, পেয়ারা বাগানে গোবর সার বেশি দেওয়া হয়। আর ফল আসতে শুরু করলে বিষ দিতে হয় মোট পাঁচবারের মতো। সে সময় পানি দিয়ে পুরো মাটি ভিজিয়ে দিতে হয় মাসে তিন থেকে চারবার। এছাড়া অন্যান্য কিছু সারও প্রয়োজন মতো দিতে হয়। নাচোলের পেয়ারা বাগান।  ছবি: ইকরাম-উদ দৌলা

থাই পেয়ারা সবচেয়ে বড়টা ৫শ’ গ্রাম ওজনের হয়। আর কাজী পেয়ারা হয় সাড়ে ৫শ’ গ্রাম পর্যন্ত। বিক্রি হয় প্রতিমণ ৩ হাজার টাকা দরে। অনেক সময় কিছুটা কম-বেশিও হয়।

গোমস্তাপুরের চাষি একরামুল হক লিজ নিয়ে নাচোলে গড়েছেন পেয়ারা বাগান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দুই বছর আগে ১১ বিঘা জমিতে পেয়ারা বাগান করেছি। এবার আরো ১১ বিঘা জমি নিয়েছি। দ্বিতীয় বছরে সাড়ে আট লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। আগামী বছর ২২ বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হবে। তবে খরচ বাদ দিয়ে লাখ থাকবে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মতো।

তিনি বলেন, পেয়ারা চাষে লাভ ভালো। তবে সমস্যা হলো তৃতীয় বছর থেকে গাছ মরে যায়। আর থাই পেয়ারার গাছেই বেশি মরে। গাছ মরা রোধ করা গেলে লাভ ভালো হয়।

তবে মজার বিষয় হলো, মাঠে পড়ে থাকে বাগান। থোকায় থোকায় পেয়ারাও হয়। কিন্তু উন্মুক্ত অবস্থায় এ ফল কেউ চুরি করেন না। চাষিরা বলছেন, এটাকে এলাকাবাসী অন্যান্য ফসল চাষের মতই দেখেন। তাই কেউ কারো অনিষ্ট করেন না।

কালহরের চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, কখনো ফল চুরি হয় না। এলাকার লোকজন এদিক থেকে খুব সহযোগিতা করে। বরং কেউ ছিঁড়তে গেলে অন্যরাই প্রতিবাদ জানায়।

বাগানে ফল তোলার কাজে বা পরিচর্যায় নারী শ্রমিকদেরই বেশি নিয়োজিত করা হয় বলে জানান নজরুল ইসলাম। কেননা, নারী শ্রমিকরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। পুরুষ শ্রমিকদের এখন আর পাওয়া যায় না। তাদের মজুরিও বেশি। এক্ষেত্রে নারীরা ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা মজুরিতেই কাজে আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।