ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুনর্বাসন বিল্ডিং-মার্কেটে!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুনর্বাসন বিল্ডিং-মার্কেটে! এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুনর্বাসন বিল্ডিং-মার্কেটে

ঢাকা: এমনিতেই কচ্ছপগতিতে এগোচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) নির্মাণ কাজ। তার ওপরে হঠাৎ করেই পুনর্বাসন ব্যয় বাড়ায় সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) খাতের প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পেছাচ্ছে। অতিরিক্ত ব্যয় সংস্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ৮৫০ বর্গফুট ও এক হাজার বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট সম্বলিত ১২টি বিল্ডিং ও একটি মার্কেট নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ফ্ল্যাট ও মার্কেটের দোকানগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে নগদ অর্থের বদলে- এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের।  

ফলে আবারও মূল প্রকল্পের সংশোধন করা হচ্ছে।

সংশোধিত প্রকল্পে পুনর্বাসন খাতে ব্যয় বাড়লেও অন্য খাতে কিছুটা কমছে। তবে মেয়াদ বাড়তে যাচ্ছে চার বছর।

রাজধানীর যানজট নিরসনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীতে এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা থেকে  সংযোগ সড়কসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হবে। পুনর্বাসন ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন, ইউটিলিটি অপসারণে বিলম্ব, নতুন আইটেম অন্তর্ভূক্তি, ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি অপসারণে ব্যয় হ্রাস এবং প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদকাল বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রয়োজন বলে মনে করে সেতু কর্তৃপক্ষ।  

প্রকল্পের রুট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার- কমলাপুর-সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।

সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে ৮ হাজার ৭০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ছিলো। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, ব্যয় দাঁড়ায় ৯ হাজার ৬৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পে ২৮ একর ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ৮২৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে অন্য কিছু খাতে ব্যয় কমে পুরো নির্মাণ কাজে ব্যয় বাড়তে যাচ্ছে ১ হাজার ৬৬৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

এখন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ৩২৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড বিনিয়োগ করছে ৬ হাজার ৪৪৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

মূল প্রকল্পে সরকারি ব্যয় ছিলো ৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা ৮৭ লাখ টাকা। এখন এ খাতে ১ হাজার ৬৬৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ৪১ লাখ টাকা।

সরকারি এ ব্যয় বরাদ্দের সংস্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বিল্ডিং ও মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এভাবে বাকি অর্থের সংস্থান করতে চায় সেতু কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, সেতু কর্তৃপক্ষ ব্যয় বাড়ানোর এ প্রস্তাব পাঠালেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। তবে কয়েক ধাপে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। সভায় ছয়টি পাজেরো ও দু’টি মাইক্রোবাস কেনা নিয়ে আপত্তি তুললেও দু’টি পিকআপ ও ১৩টি মোটরসাইকেল কেনা নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র আরও জানায়, প্রায় একমাস ধরে ব্যয় বৃদ্ধির ফাইলটি পড়ে ছিলো পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দফতরে। একমাস পরে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ বিষয়ে ফের আলাপ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ইঞ্জিনিয়ার কাজী মো. ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। এখনও চূড়ান্তভাবে কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে আশা করছি, দ্রুততম সময়ে সমাধান পাবো। সবকিছু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে। তারা অনুমোদন দিলে কাজ শুরু হবে, না দিলে দেরিতে শুরু হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী হায়ার অথিরিটি, তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই হবে। আমরাও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি, যেন এর দ্রুত সুরাহা হয়’।
 
পিডি জানান, প্রথম ধাপের ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের অধিগ্রহণ চলমান। বিনিয়োগকারী ইতাল-থাই কোম্পানি নির্মাণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কাজ চলমান। ৭ হাজার পাইলের মধ্যে ৬০০টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
 
তিনি বলেন, ‘সরকারি অর্থায়নের ৭০ শতাংশ ও প্রকল্প সাহায্যের ০৭ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে ভৌত অগ্রগতি প্রায় ০৭ শতাংশ।   আশা করছি, বর্ধিত মেয়াদ ২০২০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারবো’।
 
ইউটিলিটি রিলোকেশন, অফিস বিল্ডিং নির্মাণ, ট্রেনিং, পরামর্শক সেবা, কম্পিউটার ও এক্সেসরিজ কেনা, প্যানেল অব এক্সপার্ট, সার্ভে আউট সোর্সিংসহ অন্যান্য কাজের সংস্থান রয়েছে বলেও জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
 
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হেমায়েতপুর-কদমতলি-নিমতলি-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে।

চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল এবং পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে।
 
এর ফলে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অংশে যানজট দূর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।