সোমবার (২২ মে) দুপুরে কিশোরগঞ্জ শহরের খড়মপট্টিস্থ বাসভবনে বাংলানিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি হাওরের বন্যা পরিস্থিতি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম এবং ভবিষ্যত করণীয় সম্পর্কে নিজের সরেজমিন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বন্যার পানি এখন ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে।
সদ্য হাওরাঞ্চল থেকে ঘুরে এসে এমপি তৌফিক বাংলানিউজকে জানান, বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ স্থায়ীভাবে রোধ করতে হলে সুনামগঞ্জ থেকে ভৈরব পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জালের মতো ছড়ানো নদী ও খালগুলো ড্রেজিং করা অত্যাবশ্যক।
এসব নদী-খালকে হাওরের প্রাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিচর্যা না করায় পলি জমে নদী-খাল ভরাট হয়ে পানি বহনের সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। বছরের পর পর ড্রেজিং-এর অভাবে পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে গেছে। ফলে হাওরাঞ্চলে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সমস্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ফসল ও মানুষের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।
সরকারের বিভিন্ন ফোরামে এ ব্যাপারে কথা বলার প্রেক্ষাপটে তিনি মনে করেন, অচীরেই নদী-খাল খননের জন্য উচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আমি আশাবাদী।
ড্রেজিং বা খননের পাশাপাশি প্রকৌশলী তৌফিক হাওরাঞ্চলের বাঁধগুলোর ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যান্য স্থানের মতো হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ করা হলে সেগুলো পানির তোড়ে টিকবে না। বেশ কিছু বাঁধে বন্যার চরম অবস্থায় ফাটল দেখা দেয়। হাওরের জন্য ডুবন্ত বাঁধ তৈরি করে জিও টেক্সটাইল ও কংক্রিট ব্লক দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে বন্যার সময় বাঁধগুলো ধসে যাবে না। ’
তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে হাওরের জন্য উপযুক্ত বাঁধের কারিগরি দিকগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন বলেও বাংলানিউজকে জানান।
‘তবে আমরা এখন সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছি কৃষক ও কৃষির ওপর’ জানিয়ে প্রকৌশলী তৌফিক বলেন, ‘হাওরের প্রায় সব কৃষকই ফসলহানির শিকার হয়েছেন। আমরা তালিকা করে কৃষকদের বীজ, সার, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ দিয়ে সামনের দিনগুলোতে নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করার ও ফসল উৎপাদনের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। ’
আগামী ফসল ঘরে তুলতে পারলে হাওরবাসীর পক্ষে বর্তমান দুর্যোগের প্রকোপ অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিস্ময়ের সঙ্গে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো, হাওর উন্নয়ন বোর্ডের দুটি সাব-ডিভিশনাল অফিস আছে কিশোরগঞ্জ জেলায়। একটি কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় এবং অপরটি ভৈরব পৌরসভায়। আমি বুঝি না শহরে বসে তারা কিভাবে হাওরের উন্নয়নে কাজ করবেন?’
হাওর মধ্যস্থ উপজেলা মিঠামইনে অবিলম্বে হাওর উন্নয়ন বোর্ডের একটি সাব-ডিভিশনাল অফিস স্থাপন বা স্থানান্তরের জোর দাবি জানান তিনি।
একদা যে বাসভবনের চেম্বারে বসে পিতা বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাজনীতি ও জনসংযোগ করেছেন, সেই ঘরেই এখন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত করেন জেষ্ঠ্যপুত্র ও পিতার আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। পিতার শূন্য আসনের পাশে একটি সাধারণ চেয়ারে বসে তিনি রাজনৈতিক উত্তরাধিকারীর দায়িত্ব পালন করছেন। সময় পেলেই পিতার হাতে রোপিত বাগানের পরিচর্যা করতেও ভুলছেন না।
‘কিশোরগঞ্জ জেলার মোট আয়তনের ৪০ ভাগই হাওর। জেলা শহরের ৫০ ভাগ বাসিন্দাই হাওরাঞ্চলের অধিবাসী। এদের নানা সমস্যার সমাধান করার দায়িত্বও আমার কাজের অংশ। ’ বলেন প্রকৌশলী তৌফিক।
স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘পিতার স্মৃতিধন্য প্রাঙ্গণের নির্মল পরিবেশে আমি প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা পাই। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী আদর্শকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নেওয়ার যে দীক্ষা পারিবারিকভাবে আমি পেয়েছি, তাই আমার রাজনীতির মূলমন্ত্র। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
জেডএম/