ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এবার ৩২ কোটি টাকার লিচুর ফলন হবে বগুড়ায়

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
এবার ৩২ কোটি টাকার লিচুর ফলন হবে বগুড়ায় লিচু বাগানে চাষি আনসার আলী আকন্দ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: একজন আদর্শ চাষি আনসার আলী আকন্দ। বয়স পঁয়ষট্টি ছুঁই ছুঁই। জীবনের সিংহভাগ কেটেছে তার কৃষিকাজে। এখনো কৃষিকাজ নিয়েই পড়ে রয়েছেন। এখন তার চাষের তালিকায় রয়েছে চায়না-৩ লিচুর বাগান। আর লিচুতেই দেখছেন রঙিন স্বপ্ন।

এ বয়সেও কাজকর্ম ছাড়া থাকতে পারেন না তিনি। বেকার মানে অলসভাবে জীবন কাটানো পছন্দ না তার।

কাজকর্মের মধ্য দিয়ে বাকি জীবনটা শেষ করতে চান এই চাষি। তাই দিনের প্রায় পুরোটা সময় বাগান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তিনি।

প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে কিছু মুখে গুঁজেই সোজা চলে যান নিজের হাতেগড়া প্রিয় বাগানে। খাওয়া ও নামাজের সময়টুকু বাদে সেখানেই কোটে তার সারাবেলা। নিজ হাতে বাগানের গাছগুলোর পরিচর্যা করেন। যেদিন কাজের চাপ বেশি থাকে, সেদিন নিজে আর কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তাই সেদিন জনাকয় শ্রমিক নেন। তবে তাদের সঙ্গে নিজেও কাজে হাত চালান।
জাল দিয়ে লিচু ঢেকে দিচ্ছেন চাষি আনসার আলী আকন্দ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রামের সাতিয়ানতলা চান্দুপাড়া তার গ্রামের নাম। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন আনসার আলী আকন্দ। বাড়ির পাশেই প্রায় ৪ বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন কৃষিবাগান। এরই মধ্যে এক বিঘার কিছু বেশি জমিতে প্রায় ৪০টির মত লিচু গাছ লাগিয়েছেন।

একান্ত আলাপচারিতায় আনসার আলী আকন্দ বাংলানিউজকে জানান, ২০০৩ সালের দিকে তিনি এই লিচুবাগান গড়ে তোলেন। ২০০৭ সালে এই বাগানে যুক্ত করেন চায়না-৩ জাতের লিচু গাছ। প্রথমদিকে কয়েকটি গাছ লাগান। ২০১০ সালের পর লিচু গাছের সংখ্যা বাড়ান।

তার এই বাগান মেডিসিন বা রাসায়নিকমুক্ত। তাই বাগানের ফল বিক্রির জন্য তাকে বাজার পর্যন্ত যেতে হয় না। স্থানীয় ক্রেতা বা পরিচিতজনরাই তার বাগানের ফল কিনে নিয়ে যান। অবশ্য এজন্য তাকে বাড়তি খাটুনি খাটতে হয়।
লিচু/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমগাছ ও ফলের পরিচর্যার পেছনে তাকে প্রচুর সময় ও খাটুনি দিতে হয়। এখন থেকে দেড়-দু’সপ্তাহ পর বাগানের লিচু তোলা শুরু করবেন। টার্গেটের চেয়ে বেশি টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বাগানি আনসার আলী আকন্দ।

তার মতো অসংখ্য লিচু চাষি রয়েছেন এ জেলায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ২ হাজার ৫শ’ ৮৮ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।

এসব বাগানে চায়না-৩, বোম্বাই, মোজাফফর কুঁড়ি জাতের লিচু লাগানো হয়েছে। সীমিত আকারে এসব বাগান থেকে এরই মধ্যেই লিচু তোলা শুরু হয়েছে। এছাড়া এ জেলায় আরো লিচু বাগান রয়েছে। উপযুক্ত বয়স না হওয়ায় সেসব বাগানের গাছে এবার লিচু আসেনি।
জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে লিচু গাছ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমতিনি আরো জানান, এসব বাগানে প্রায় ৩৩ হাজার (লিচু ধরেছে) গাছ রয়েছে। চাষির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজারের মত। এসব গাছ থেকে ২ হাজার ৬শ’ ৪০ মেট্রিক টনের মত লিচুর উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৩২ কোটি টাকা।

ওবায়দুর রহমান মন্ডল আরো জানান, প্রত্যেক বছর এ জেলায় লিচুর চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। এক্ষেত্রে চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাদের লিচু চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কৃষক আগের তুলনায় লিচু চাষে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তাছাড়া লিচুর বাজারমূল্যও বেশ ভাল। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে এ জেলায় আরো বেশি জমিতে আরো বেশি কৃষক লিচু চাষের দিকে ঝুঁকবেন বলেও আশাবাদী এই কৃষিবিদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।