ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সাক্ষাৎকারেই চাকরি!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
সাক্ষাৎকারেই চাকরি! সাক্ষাৎকারেই চাকরি

ঢাকা: জাতীয় পত্রিকায় বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরির লোভনীয় বিজ্ঞাপন। মাত্র এইচএসসি পাস যোগ্যতা নিয়ে দেশের যেকোনো প্রান্তের যে কেউ সাক্ষাৎ করলেই মিলছে নিয়োগপত্র। কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপও সরবরাহ করবে অফিস কর্তৃপক্ষ।

চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার পর কাগজে কলমে বুঝিয়ে দেওয়া হয় মোটরসাইকেলও। তবে, সিকিউরিটি মানি হিসেবে প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।

টাকা দিয়ে নির্ধারিত তারিখে যখনই অফিসে যোগদান করতে যাবেন, তখনই কাগুজে চাকরিপ্রাপ্তরা দেখেন, অফিস ঠিকই আছে শুধু চাকরি দানকারী কর্তৃপক্ষ আর সেই ঠিকানায় নেই। অর্থাৎ জামানতের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন তারা।

অভিনব এই কৌশল অবলম্বন করে প্রতারণা করা এমন একটি চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। যারা এভাবে স্থান বদল করে নতুন কোথাও অফিস খুলে আবার প্রতারণা করে আসছিলেন জনসাধারণের সঙ্গে।

শনিবার (২০ মে) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পিসি গার্ডেন টাওয়ারের সপ্তম তলা থেকে এই চক্রটিকে আটক করা হয়।

সাক্ষাৎকারেই চাকরি

আটককরা হলেন- নাসির উদ্দিন, তোফায়েল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও আরমান হাওলাদার।

ভুক্তভোগী তিন চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান র‌্যাব-৩ এর মেজর আব্দুল্লাহ আল মারুফ।

ভুক্তভোগীদের টঙ্গীর এক বাসিন্দা শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামীণ টাওয়ারে চাকরির একটি বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করি। তারপর আমাদের পুরানা পল্টন এলাকার অফিসে আসতে বলে। অফিস এসে দেখে সবই ভালো লাগে। তারপর আমাকে সিভি দিতে বললে কুরিয়ারে সিভি পাঠাই। তারাও কুরিয়ারে আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাঠান। গত মাসের ১৫ তারিখে বলে মে মাসের ১০ তারিখ থেকে জয়েনিং। এর আগে মোটরসাইকেলের জন্য ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলে।

তিনি বলেন, তাদের কথা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা দেই। যেহেতু ১০ তারিখে জয়েন করার কথা, সেদিন অফিসে এসে দেখি কেউ নেই। সবাই অফিস ছেড়ে চলে গেছে। তারপর বিষয়টি আমরা র‌্যাবকে জানাই।

তার পরিচিত চারজনের কাছ থেকে এভাবে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান শাহ আলম।

র‌্যাবের অভিযানের সময় আটক তোফায়েল আলাপকালে জানান, এই মাস থেকে তিন এই অফিসে চাকরি করছেন। তিন এমন প্রতারণার বিষয়ে জানেন না। তবে তিনি অফিসের ঊর্ধ্বতনদের সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

পিসি গার্ডেন টাওয়ারের মালিক সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, এটা সম্পূর্ণ রেডি একটা অফিস। তারা মাসের সাত তারিখে পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকার চেক ও ২০ হাজার টাকা নগদ দিয়ে ভাড়া নেন। চেকটি আমি এখনও যাচাই করিনি।

সাক্ষাৎকারেই চাকরি

তিনি আরও বলেন, ফ্লোর ভাড়া নেওয়ার সময় তারা সিকিউরিটি কোম্পানির কথা বলে এবং এ কোম্পানির প্রধান একজন মেজর বলে জানান।

এ বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর মারুফ বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিতে চাকরির জন্য প্রলোভন দেখাতো চক্রটি। ইন্টারভিউ বোর্ডেই নিয়োগপত্র দিয়ে দিতো। তারপর কাগজে-কলমে মোটসাইকেল বুঝিয়ে দিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো।

তিনি বলেন, টাকা নেওয়ার পর মাস শেষে তাদের অফিসও নেই হয়ে যেতো। গত মাসে পল্টনে অফিস ছিলো, এ মাসে কারওয়ান বাজারে অফিস করেছে। এর আগে গুলশানে অফিস ছিলো তাদের। প্রাথমিকভাবে বছরখানেক ধরে এ প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
পিএম/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।