ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ধ্বংসের মুখে উপাস সম্প্রদায়ের মন্দির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
ধ্বংসের মুখে উপাস সম্প্রদায়ের মন্দির উপাস সম্প্রদায়ের মন্দির- ছবি: বাংলানিউজ

মেহেরপুর থেকে: ইট, বালু, চুন-সুড়কি খসে পড়ছে। ফাটলে জড়িয়েছে শ্যাওলা। দরজা-জানালার সৌন্দর্য কুঁরে খাচ্ছে ঘুনপোকার দল। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাস প্রবক্তা বলরাম হাঁড়ীর মন্দিরটির এমনই করুণ দশা এখন।চরম অযত্ন আর অবহেলার মধ্যে সংস্কারহীন মন্দিরটি এখন বলতে গেলে ধ্বংসের মুখে।

মেহেরপুর পৌর এলাকার মালোপাড়ার মন্দিরটির এমন বেহাল অবস্থার দেখা মেলে সরজমিনে গিয়ে। এখানে মন্দিরটিতে প্রতিবছর দোলযাত্রা উপলক্ষে মেলা হয়।

দোল পূণির্মা উপলক্ষে মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে পুণ্যার্থীদের আগমন ঘটে। বাংলা ১২৫৭ সালের ৩১ অগ্রহায়ণ মেহেরপুর শহরের মালোপাড়ার ওই স্থানটিতেই ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন সাধক বলরাম হাঁড়ী। তার ভক্তরা পরে ওই স্থানেই গড়ে তোলেন বলরাম হাঁড়ীর আশ্রম বা মন্দির।

এই উৎসব ও দোল পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে গোটা মেহেরপুর মালোপাড়া সেজে ওঠে নবরূপে। চারিদিকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। বলরাম হাঁড়ী মন্দিরে প্রতিবছর এই উৎসব পার্বণ পালন করে থাকেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্নবর্ণের লোকেরা। তাদের সঙ্গে অন্যসব সম্প্রদায়ের লোকেরাও মেতে ওঠেন উৎসবে।

উপাস সম্প্রদায়ের রতন নামের একজনের কথা হয়। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘অর্থের অভাবে মন্দিরটি সংস্কার করা যাচ্ছে না। একারণে আজ ধ্বংসের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের এই মন্দিরটি। ’
উপাস সম্প্রদায়ের মন্দির- ছবি: বাংলানিউজ
মালোপাড়ার (৭০) বছর বয়সী তরুণ কুমার মন্ডল জানান, বলরাম হাঁড়ীর জন্ম ও মৃত্যু দুটোই হয় মেহেরপুর শহরের মালোপাড়াতে। বলরাম হাঁড়ী ছিলেন একজন অক্ষরজ্ঞানহীন সাধক। লালন শাহের সমসাময়িক এ সাধকের রচিত গানে তার দর্শন ও মতবাদ ফুটে উঠেছে। জমিদার পদ্মলোচনের  বাড়ির চৌকিদার ছিলেন। চুরির অপবাদ মাথায় নিয়ে তিনি চাকরি ও সংসার ত্যাগ করেন। পরে বিভিন্ন তীর্থস্থানে ঘুরে ব্যাপক অধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করেন। এক পর্যায়ে উপাস নামের এই সম্প্রদায় গড়ে তোলেন।

বাংলাদেশের চট্টগ্রামসহ নানা অঞ্চলে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং সেইসঙ্গে পাশ্ববর্তী দেশ নেপাল ও শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন স্থানে তার ভক্তরা ছড়িয়ে রয়েছেন। প্রতিবছর দূরদেশ ও দূরদূরান্ত থেকে তার ভক্ত ও অনুসারীরা এখানে আসেন। এ উপলক্ষে বলরামের আখড়ায় মেলা বসে। এইভাবেই চলছে প্রায় ১৫০ বছর ধরে।

প্রতিবছর উপাস সম্প্রদায়ের প্রবক্তা শ্রী শ্রী বলরাম হাঁড়ীর শ’ শ’ ভক্ত মিলিত হন তিন দিনব্যাপী মহোৎসবে। তারা হাঁড়ীর জীবনের উপর আলোচনা করেন, কীর্তন গান পরিবেশন করেন, তার জীবনের ওপর আলোচনা করেন এবং সমবেত প্রার্থনায় মিলিত হন।

বলরাম হাঁড়ীর মন্দিরের সভাপতি গোবিন্দ হালদার। তিনি জানান, মূলত নিম্মবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাই বলরাম হাঁড়ীর ভক্তি ও অনুসারী। তারাই তাঁর উদ্দেশে পূজা-অর্চনা করে আসছেন।

গোবিন্দ হালদার সখেদে বলেন, পৌর এলাকায় মোট ৬টি মন্দির আছে। প্রতিটি মন্দিরেই সরকারি বে-সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে থাকে। কিন্তু আমরা নিম্নবর্ণের লোক বলে আমাদের প্রিয় মন্দিরের জন্য দেওয়া হয় নামমাত্র আর্থিক সহায়তা।

সরকারের কাছে তার দাবি, বলরাম হাঁড়ীর মন্দিরকে পর্যাপ্ত আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্নবর্ণের মানুষদের প্রিয় মন্দিরটির সংস্কারের ব্যবস্থা করা হোক। তাদের পূজা-অর্চনা ও নির্বিঘ্ন আরাধনার সুযোগ করে দেওয়া হোক। খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশন

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।