ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

১৬৩ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে উডবার্ন লাইব্রেরি

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৭
১৬৩ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে উডবার্ন লাইব্রেরি উডবার্ন লাইব্রেরি/ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া:  ঊনিশ শতকের প্রথম ও মধ্যভাগে ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠে পাবলিক লাইব্রেরি আন্দোলন। প্রবল দাবির মুখে ১৮৫০ সালে ব্রিটিশ সংসদে পাস হয় পাবলিক লাইব্রেরি বিল। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকায় এর জের এসে পড়ে  অবিভক্ত ভারতবর্ষেও।

তারই ফলশ্রুতিতে ১৮৫৪ সালে বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বগুড়া উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি’। যার বর্তমান নাম ‘বগুড়া উডবার্ন জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার’।



দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এ লাইব্রেরিটি দুই লাখের বেশি বিরল ও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের বিশাল সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছিল শত বছর আগেই। কালের বিবর্তনে আগের অবস্থায় না থাকলেও আজও জ্ঞানের ভাণ্ডার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নানা প্রতিকূলতায় ব্যাপক আকারে না হলেও চারপাশে ছড়াচ্ছে জ্ঞানের আলো।


লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন বেশ কয়েকজন ইংরেজ আমলা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বগুড়ার শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং এখানকার নওয়াব পরিবারের অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতাও এক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখে।
 
তৎকালীন অ্যাডওয়ার্ড পার্ক, বর্তমানের বগুড়া পৌরপার্ক ও উডবার্ন লাইব্রেরি নওয়াব পরিবারের দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত। বগুড়া শহরের মালতিনগর মৌজার বর্তমান স্টেশন ক্লাবের জায়গায় প্রথমে স্থাপিত হয়েছিল লাইব্রেরিটি। কোনো এক সময় আগুনে ধ্বংস হয়ে যায়। পরে বর্তমান জায়গায় স্থানান্তরিত হয়।
 
 
শিক্ষক, সংগঠক ও নাট্যকার শ্যামল ভট্টাচার্যে্যর লেখা থেকে জানা গেছে, বিপুল সংখ্যক পুস্তকের সংগ্রহ ছিল লাইব্রেরিটিতে। শুরুর কয়েক বছরের মাথায় লক্ষাধিক মূল্যবান ও দুস্প্রাপ্য বইয়ের ভাণ্ডারে পরিণত হয় এ গ্রন্থাগার।

এসব বই পড়তে দূর-দূরান্ত থেকে জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা আসতেন। তাদের মধ্যে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহিনীমোহন ভট্টাচার্য্য, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড. রমেশ চন্দ্র দত্ত, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সৈয়দ মুজতবা আলী, বিখ্যাত গণিত শাস্ত্রবিদ লেখক ব্রজেন্দ্রলাল শিরোমণি প্রমুখ। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে পণ্ডিত ব্যক্তিরাও এ লাইব্রেরিতে এসে বই পড়তেন। ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক পণ্ডিত ঋষিকল্প কিশোরীলাল রায়ও পড়াশোনা করেছেন এই লাইব্রেরিতে।
 
এক সময় ইংল্যান্ড থেকে সদ্য প্রকাশিত বই অর্ডার দিয়ে আনা হতো। তখন টাকার কোনো সমস্যা হতো না। রংপুরের কাঁকিনার মহারানি দেয়ালজোড়া শালকাঠের আলমারিসহ হাজার হাজার বই দান করেছিলেন এই লাইব্রেরিতে। বিশ হাজারের মতো বই দিয়েছিলেন জমিদার শশধর রায় চৌধুরী ও নওয়াব পরিবার। ঊনিশ শতক জুড়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় যতো বই লেখা হয়, তার সিংহভাগ বইয়ের দেখা মিলতো উডবার্নে।


সব মিলিয়ে শত বছর আগেই লাইব্রেরিটিতে বইয়ের সংখ্যা প্রায় দুই লাখে দাঁড়ায়।
 
সরেজমিনে গেলে বগুড়া উডবার্ন সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মো. রোকনুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, এখনো পাঠকদের জ্ঞান আহরণের কেন্দ্রস্থল এ লাইব্রেরিটি। প্রত্যেক বছর নতুন বই কেনা হয়। অর্থ বরাদ্দ দেয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর বই কিনে পাঠায় গণগ্রন্থাগার অধিদফতর।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।