ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আসছে আরো উন্নত হাড়িভাঙা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
আসছে আরো উন্নত হাড়িভাঙা হাঁড়িভাঙা আম

ঢাকা: বিশুদ্ধতা রক্ষা করে প্রতিবছর গুণগতমানের ফল পেতে সুস্বাদু হাড়িভাঙা আমের জাত নিয়ে গবেষণা চলছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। চাপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও রংপুরের বুড়িরহাট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ ড. হামিম রেজা এই গবেষণা পরিচালনা করছেন।  

এই গবেষক ‘জার্ম প্লাজম’ পদ্ধতিতে পাঁচ বছর আগে গবেষণা শুরু করেন। বুড়িরহাটে দশ বছর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৫ সালে চাপাইনবাবগঞ্জে বদলি হন তিনি।

 

বাংলানিউজকে ড. হামিম রেজা বলেন, এ আমের অলটারনেট বিহাবিয়ার হ্যাবিট রয়েছে। যার অর্থ একবার ফল দিলে পরেরবার আর ভালো ফল দেয় না। এক্ষেত্রে ১-৫ শতাংশ ফলন হয় বা কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না। এটা কৃষকের জন্য লোকসান। তাই গবেষণা সফল চলে সবচেয়ে লাভবান হবেন আম চাষিরাই।
 
আদি নিবাস রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জের ২৪টি বাগানের ২৪টি ফলজ গাছ নিয়ে গবেষণা চলছে জানিয়ে ড. হামিম বলেন, ২০১৪ সালে এই ২৪ বাগান থেকে গাছের বয়স, আমের আকারসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আম চাষ করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ১৯ গাছে আম ধরেনি। মাত্র ৫টিতে আম ধরেছে। পরের বছরে দেখা গেছে ২টি ছাড়া বাকিগুলোতে আম ধরেছে।
 
এ বছরের জুন মাসে আম পূর্ণাঙ্গ হওয়ার সময় বাগানের ওইসব গাছ থেকে আবারো পর্যবেক্ষণ করে নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানান ড. হামিম।
 
গবেষণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি ওখান থেকে একটা উন্নতমানের জাত বের করতে।
 
ওইসব গাছ থেকে সুপেরিয়র টাইপের জাত বের করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যে গাছে প্রতিবছর আম ধরবে, গুণগতমান ভাল, ফলনও ভাল হবে- এই তিনটি গুণ এবং ‘ক্লোনাল সিলেকশন’ এর ভিত্তিতে উন্নত জাত নির্বাচন করব।
 
‘ক্লোনাল সিলেকশন’ সম্পর্কে তিনি বলেন, দেখা গেছে, এক জাত জুনের প্রথমে পূর্ণাঙ্গ হয়, আরেক জাত জুলাইয়ের প্রথম দিকে। এগুলোর মধ্যে যে জাতের গুণগত মান উন্নত সেটাই ‘ক্লোনাল সিলেকশন’।
 
গবেষণা শুরুর দ্বিতীয় বছরও যে ৫টি গাছে আম ধরেছে সেগুলো থেকে সায়ান সংগ্রহ করে ৫টি চারা তৈরি করে বুড়িরহাটে রোপণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উন্নত জাতের বিষয়ে মনোনয়ন দিয়ে থাকে বলে জানান ড. হামিম।
 
ওই ২৪ গাছের চার বছরের পর্যবেক্ষণের তথ্য নিয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন তৈরি করে গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হবে এবং অভ্যন্তরীণভাবে উপস্থাপন করা হবে।
 
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে মনোনয়ন পেলে সেই জাত কৃষকদের মাঝে মরবরাহ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে বাগান করলেও কৃষক জানে না কোনটি উন্নত জাত। এতে তারা লোকসানের শিকার হন।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় জানায়, রংপুরের মিঠাপুকুরের গণ্ডি পেরিয়ে পাশের জেলা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে হাড়িভাঙা আম।
 
হাড়িভাঙা আম রংপুরের ঐতিহ্য উল্লেখ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স.ম. আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, আশপাশের জেলাগুলোতেও বিস্তার হচ্ছে হাড়িভাঙার চাষ। এছাড়া সারা দেশে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, হাড়িভাঙার গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১১ মেট্রিকটন। আর বিঘা প্রতি দেড় মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি উৎপাদন ব্যয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। আর বিঘা প্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা।
 
হাড়িভাঙা আমের অর্থনৈতিক গুরুত্বটাই বেশি। মৌসুমের শুরুতে বাজার দর ৮০-১০০ টাকা, মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ৫০-৮০ টাকা এবং শেষ দিকে ৩০০-৪২৫ টাকা কেজি বিক্রি হয় হাড়িভাঙা আম। হেক্টর প্রতি ৫-৬ লাখ টাকা আয় করেন কৃষকরা।
 
ড. হামিম রেজা বলেন, যে গবেষণা চলছে তাতে প্রতিবছর উন্নতজাতের ফল দেয় এমন জাত উদ্ভাবন হলে কৃষকরা লাভবান হবে এবং ঐতিহ্য রক্ষায় আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।
 
বাংলদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।