ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

আগামী সপ্তাহেই ঝুড়িতে নামছে ‘রাজশাহীর আম’

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
আগামী সপ্তাহেই ঝুড়িতে নামছে ‘রাজশাহীর আম’ রাজশাহীর আম

রাজশাহী: ‘রাজশাহীর আম’ নামেই যার খ্যাতি দেশজুড়ে। কেবল দেশেই নয় যাচ্ছে বহির্বিশ্বেও। তাই বছরজুড়েই চলে অপেক্ষা। চলে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। মধুমাস জ্যৈষ্ঠ পড়েছে মাত্রই।

কিন্তু রসালো আম ছাড়া কী আর মধুমাস জমে! টসটসে রসে ভরা মিষ্টি আম! বাহারি নাম আর স্বাদের আম। প্রতীক্ষার ইতি টেনে আগামী সপ্তাহে পরিপক্ক হয়েই গাছ থেকে বাজারের ঝুড়িতে নামছে ‘রাজশাহীর আম’।

দেশবাসীকে বিষমুক্ত ফল দিতে গেলো বছর গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন। কিন্তু তীব্র তাপদাহে সময়ের আগেই অনেক আম পেকে গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  

সাধারণত জ্যৈষ্ঠ শুরুর পর রাজশাহীতে ধীরে ধীরে আম পাকতে শুরু করে। কোনো আম আগে পেকে যায়, কোনোটা আবার পরে। তাই বিভিন্ন জাত ও নামের আম পর্যায়ক্রমে আসতে থাকে বাজারে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা মেনে নামানোয় গত বছর বাজারে প্রায় এক সঙ্গেই হাজির হয় সব জাতের আম।  

এতে ক্ষতির মুখে পড়েন এই অঞ্চলের আমচাষিরা। তবে এবার তেমনটি হওয়ার জো নেই। গত বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেয়নি জেলা প্রশাসন। কিন্তু বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে ঠিকই। এজন্য রাজশাহীর নয় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খোঁজ রাখছেন সবসময়।  

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুব্রত পাল বাংলানিউজকে বলেন, গাছ থেকে অপরিপক্ক আম নামালেই কৃত্রিম উপায়ে তা পাকানোর জন্য চেষ্টা করা হবে। এজন্যই গত বছর নিষেধাজ্ঞা ছিলো। কিন্তু রাজশাহীর চাষিরা এখন অনেক বেশি সতর্ক। তাই এবার কোনো নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি।

তবে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি করে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। দিন-ক্ষণ, আমের জাত ও ধরন দেখে তারা নিজেরাই ঠিক করবেন— কবে কখন, কারা গাছ থেকে আম নামাবেন। প্রশাসন কেবল বলে দিয়েছে, কোন আমটি কতো তারিখের আগে পাড়া যাবে না। আর উপজেলা পর্যায়ে থাকা কমিটি আম পাড়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।  

এবার সবার আগে গোপালভোগ জাতের আম পাড়ার সম্ভাব্য সময় বলে দেওয়া হয়েছিল ১৫ মে। তবে অনেক গাছে এখনও আম পাকেনি। আবার কোনো কোনো গাছে পেকে গেছে। তাই দুই-একটি জায়গায় আম পাড়া হলেও মূলত আগামী সপ্তাহের ২১ মে থেকে পুরোদমে আম পাড়া শুরু হবে।

এদিকে, সেভাবে এবার সময় বেঁধে দেওয়া না হলেও আম পাড়ার বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন এই অঞ্চলের আমচাষিরা। তারা বছরজুড়ে পরিশ্রমের এই ফসল গাছ থেকে নামাতে চান পরিপক্ক করেই।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রামের আমচাষি জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এই বছর ২০ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে তার। এছাড়া গ্রামের বিভিন্ন স্থানে আরও ১৭শ আম গাছ কিনে রেখেছেন। আর বারো মাস ধরেই যত্ন ও পরিচর্যা চলছে তার বাগানের প্রতিটি গাছের। অপরিপক্ক আম আগে নামালে তা কেমিক্যাল দিয়ে পাকাতে হয়। কিন্তু তাদের আমে কোনো কেমিক্যাল থাকে না।

কারণ, তার মতো সব চাষিই গাছ থেকে পরিপক্ক আম নামান। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। এরই মধ্যে প্রায় সব গাছের আমেই পূর্ণতা এসে গেছে। অনেকেই গুটি জাতের আম পাড়তে শুরু করেছেন। তাই সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই তার বাগানে পুরোদমে আম পাড়া শুরু করবেন। প্রথমেই ‘জাত আম’ খ্যাত গোপালভোগ রাজশাহীর বাজারে আসবে বলেও জানান বাঘা উপজেলার আমচাষি জিল্লুর রহমান।   

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গুটি আম প্রতি বছরই একটু আগে পাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই অনেকে এখন গুটি আম নামাতে শুরু করেছেন। তবে আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত রাজশাহীর আম কর্মযজ্ঞ শুরু হবে আগামী সপ্তাহেই। প্রথমেই গোপালভোগ ও গুটি জাতের আম পাড়তে শুরু করেবেন বাগান মালিকরা।
 
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিনের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের জনপ্রিয় আমের পরিপক্বতা আসার সময়কালের মধ্যে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে উঠবে গোপালভোগ আম। অত্যন্ত সুস্বাদু, আঁশবিহীন, আঁটি ছোট আম। সাইজ মাঝারি, কেজিতে ৫টা থেকে ৬টা ধরবে। এর পর পাকা শুরু হবে ল্যাংড়া আম। তাই রাজশাহীতে জুনের প্রথম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে উঠবে ল্যাংড়া আম। নাম ল্যাংড়া হলেও এর স্বাদ অসাধারণ। আঁটি ছোট ও পাতলা, খোসা খুব পাতলা, রসালো, গায়ে শুধুই মাংস।  

এছাড়াও জনপ্রিয় কিছু আমের মধ্যে রয়েছে—

হিমসাগর: ক্ষীরশাপাতি, যাকে সবাই হিমসাগর বলে। এই আম সবচেয়ে আগে পাকে সাতক্ষীরায়। তাই মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই সেখানে পাওয়া যায় এই আম। তবে পরিপক্ক হওয়ার পর ক্ষীরশাপাতি আম রাজশাহী অঞ্চলে নামবে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের প্রথম সপ্তাহে। এই আমটিও প্রায় গোপালভোগের মতোই তবে সাইজে বড়। অত্যন্ত মিষ্টি ও আঁশহীন আম।  

লক্ষ্মণভোগ ও মোহনভোগ: আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দ্বিতীয় সপ্তাহে নামবে লক্ষ্মণভোগ আম। এই আমের আঁটি ছোট, বেশ বড় সাইজের, মিষ্টি স্বাদের আম।

বোম্বাই: রাজশাহীতে এই জাতের আম নামবে মে মাসের শেষ সপ্তাহে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। বড় আঁটি এবং বোম্বাই জাতের অনেক বড় সাইজের আম এটি।

ফজলি: রাজশাহীতে আমের রাজা বলা হয় ফজলিকে। এটি কাঁচা খেতে যেমন মজা এবং মিষ্টি তেমনি পাকাও। রাজশাহীতে জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে শেষ সপ্তাহে নামবে এই আম।

আশ্বিনা: রাজশাহীর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশ্বিনা আম পাকা শুরু করবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। আগস্টের প্রথম প্রথম থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পাওয়া যাবে বছরের এই শেষ আম।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
এসএস/এসএনএস
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।