ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লোডশেডিংয়ে নাকাল ময়মনসিংহ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
লোডশেডিংয়ে নাকাল ময়মনসিংহ লোডশেডিংয়ে নাকাল ময়মনসিংহ। ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: ‘বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলার সঙ্গে চাহিদা বা সরবরাহে ঘাটতির সম্পর্ক নেই। ঝড়ের ছোবলের খেসারত গুণতে হচ্ছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’

কণ্ঠে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে উপরের কথাগুলো একনিশ্বাসে বলে গেলেন পিডিবি, ময়মনসিংহের প্রধান প্রকৌশলী ফকরুজ্জামান।

বিদ্যুৎহীনতার দুর্ভোগের জন্য মোবাইল ফোনে মঙ্গলবার (১৬ মে) দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় বাংলানিউজ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময় এভাবেই সব দায় চাপালেন ঝড়ের ওপর।

অথচ ‘চাহিদা বা সরবরাহে ঘাটতির সম্পর্ক নেই’ বলে তিনি যা বলছিলেন তার পুরোটাই ছিল তার মনগড়া। তার সঙ্গে কথা বলার সময়ও বিদ্যুৎহীন ছিল শহরের অনেক এলাকা। এরপর একদিন চলে গেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বিভিন্ন উপজেলা সদরেও দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় টানা প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর দেখা মিলেছে বিদ্যুতের।

এভাবেই বিদ্যুতের জন্য হাহাকার চলছে ময়মনসিংহে। হাঁপিয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎহীন দু:সহ গরমে চরম সমস্যায় পড়েছে শিশু, রোগী ও বয়োবৃদ্ধরা। ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে।

গ্রাহকরা জানান, গত ক’দিন ধরেই ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। সানকিপাড়া শেষ মোড়, গোহাইলকান্দি, বড় বাজার, ছোট বাজার, কাঠগোলা, গলগন্ডা, চরপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না।

সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী কোহিনূর আক্তার বাংলানিউজকে জানান, দিন-রাতের অনেকটা সময়জুড়েই বিদ্যুৎ থাকছে না। বাসায় মোটর থেকে পানিও ওঠানো যাচ্ছে না। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘরের কাজ করতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। বিদ্যুতের ঘনঘন আসা-যাওয়াতে ইলেকট্রনিক সামগ্রীও নষ্ট হচ্ছে।

শহরের ১ নং ওয়ার্ডের গলগন্ডার বাসিন্দা মারুফ হোসেন মুন্না কাজ করেন টাঙ্গাইলের আমান ফিস ফিডের বিক্রয় নির্বাহী হিসেবে। সারাদিন খাটুনির পর ঘরে এসেই দেখেন বিদ্যুৎ নেই।

বিদ্যুৎহীন গাঢ় অন্ধকারে বিপর্যস্ত জীবনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, রোববার রাত ৯টায় ঝড় শুরুর আগে বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর আসে ৩৮ ঘন্টা পর। রাতের শেষভাগে বিদ্যুৎ এলেও দিনের বেলায় ঘনঘন এসেছে আর গিয়েছে। লোডশেডিংয়ে নাকাল ময়মনসিংহে-ছবি: বাংলানিউজবিদ্যুৎতের অভিযোগ শাখায় বারবার খোঁজ নিলেও তারা সঠিক কারণ না বলে একেক সময় একেক রকম মনগড়া, ভুতুড়ে তথ্য দিচ্ছেন—এমন অভিযোগ মারুফ হোসেন মুন্নাসহ অনেকের।

বিদ্যুৎহীন অসহ্য গরমে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া দুরূহ জানিয়ে আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুধী খানম ফারিয়া বলে, একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং। অসহনীয় অবস্থা।

একই রকম কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদেকুল ইসলাম রিমনের ভাষ্য: পড়ার সময়টাতেই বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে বেশি। এতে পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটছে।

এ তো গেলো ময়মনসিংহ শহরের চিত্র। শহরতলীতে অবস্থা এর চেয়েও নাজুক। সদর উপজেলার কাতলাসেন এলাকায় প্রায় ৪৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ নেই। সেখানে ভোগান্তি অবর্ণনীয়।

কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব মাদানী বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় শহরে গিয়ে দু’দিন মোবাইল ফোন চার্জ করতে হয়েছে। ৪৮ ঘন্টায় বিদ্যুৎ ছিল মাত্র ঘন্টা দুয়েক।  

স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, শহরে বিদ্যুৎ চুরির হিড়িক পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে অবৈধ রফা করে চলছে অনেক অবৈধ সংযোগ। এরা বিভিন্ন কলোনি ও বস্তিতে অবৈধ সংযোগ দেবার পাশাপাশি ব্যাটারি চালিত অটো রিকশার প্রায় তিন শতাধিক গ্যারেজে অবৈধ সংযোগ দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করছে। এজন্যই বাড়ছে লোডশেডিং।

অথচ ঝড়ের ওপর দায় চাপিয়ে লোডশেডিং’র বিষয়টি আড়াল করতে চাইলেন পিডিবি, ময়মনসিংহের প্রধান প্রকৌশলী ফকরুজ্জামান।

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি এ নিয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে ফোনের সংযোগ কেটে দিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
এমএএএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।