ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি বেনাপোল বন্দরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি বেনাপোল বন্দরে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি বেনাপোল বন্দরে। ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): বেনাপোল স্থলবন্দর দেশের বৃহত্তম ও এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। অথচ গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটির অবকাঠামো উন্নয়নে এখনো আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি।

নানান অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এর ফলে যেমন ব্যাহত হচ্ছে বাণিজ্য তেমনি সরকারও হারাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্দরটির এহেন অবস্থা চলতে থাকলেও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের এর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের ব্যাপারে কোনো গরজ নেই।

অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, চলমান সমস্যাগুলোর ব্যাপারে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি তারা দেখছেন।

জানা যায়, ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু বেনাপোল স্থলবন্দরের। দেশের ২২টি স্থলবন্দরের মধ্যে চালু আছে ১১টি। এই ১১টির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেনাপোল বন্দর। ভারতের পশ্চিবঙ্গ রাজ্যে রাজধানী কলকাতা থেকে মাত্র ৩ ঘন্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছাতে পারে বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এপথে বাণিজ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের।

বেনাপোল বন্দর ঘুরে দেখা যায়, বন্দরের রাস্তাঘাট ও পণ্যাগারের বেহাল দশা। এখানে আমদানি পণ্যের ধারণ ক্ষমতা ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সার্বক্ষণিকভাবে  এখানে  পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিন টন। জায়গার অভাবে আমদানি পণ্য পড়ে রয়েছে রেল লাইনের খাদে। অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে সামান্য বৃষ্টি বাদলায় বন্দরে জমছে হাঁটু জল। কি রাত কি দিন সবসময় বন্দর এলাকায় আমদানি পণ্যে তীব্র জট লেগেই রয়েছে। একের পর এক পণ্য চুরি ও নিরাপত্তাকর্মী হত্যার মতো নেতিবাচক ঘটনা ঘটলেও বন্দরে বসানো হয়নি কোনো সিসি ক্যামেরা।

জনবলের অভাবে বন্দরের প্রতিটি পণ্যাগারে রয়েছে ‘এনজিও’ নামের বহিরাগতরা। চুরি হওয়া আমদানি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বন্দরের সামনেই নামে-বেনামে বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছে। অথচ কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা জর্জরিত হয়ে লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। লোকসানে নাকাল হয়ে অনেকে এ বন্দর থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। ফলে পরপর ৪টি অর্থবছর ধরে এখানে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।

এদিকে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অনেক আগেই টেকসই উন্নয়ন করা হয়েছে। সেখানে পুরো বন্দর এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন। রয়েছে সীমান্তরক্ষী বিএসএফ ও বিভিন্ন সংস্থ্যার নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ওয়্যারহাউজ, চোরাচালান প্রতিরোধে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক নানা ব্যবস্থা। সেসবের কোনোটিরই উপস্থিতি নেই  বেনাপোল বন্দরে।

বেনাপোল বন্দর আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরে সমস্যার অন্ত নেই। আজও অটোমেশনের আওতায় আসেনি এই বন্দর। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ দিচ্ছেন আর কর্তৃপক্ষ শুধু শুনেই যাচ্ছেন। কাজের কাজ কিছুই করছেন না তারা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, প্রতিটি বৈঠকে উন্নয়নের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলেও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এখানে নজরদারিও কম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুনজর দিলে প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর থেকে বর্তমানে যে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক(ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, এরই মধ্যে বন্দরে কিছু উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে। জায়গা অধিগ্রহণসহ আরো কিছু উন্নয়নের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ওই সব কাজ সমাপ্ত হলে তখন ব্যবসায়ীদের আর অভিযোগ থাকবে না।

কাস্টমস সূত্রে জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২০৩ কোটি,২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ৮কোটি ৭১ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঘাটতি ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ,২০১২-১৩ অর্থবছরে ঘাটতি ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৯৪ কোটি।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে এপথে ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমেছে। আমদানি হয়েছে ১২লাখ ৯৮হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন পণ্য। এক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল আগের বছরের তুলনায় ৮০ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৬ ঘণ্টা, মে ১৮ ,২০১৭
এজেডএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।