ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অপারেশন ‘সান ডেভিল’ সমাপ্ত, ১১ বোমা-পিস্তল উদ্ধার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৭
অপারেশন ‘সান ডেভিল’ সমাপ্ত, ১১ বোমা-পিস্তল উদ্ধার গোদাগাড়ীর জঙ্গি আস্তানার অভিযান সমাপ্ত

গোদাগাড়ীর বেনীপুর (রাজশাহী) মাছমারা থেকে: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
 

শুক্রবার (১২ মে) বেলা ১টা ৫ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন রাজশাহীর অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অপারেশন) নিশারুল আরিফ। এ সময় রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা, রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সুমিত চৌধুরীসহ ঢাকা থেকে আসা বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 
 
তিনি বলেন, আস্তানা থেকে ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ১১টি বোমা, ১টা পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন, জঙ্গি মতাদর্শের কিছু বই, গান পাউডার ও পুলিশের পোশাকের রংয়ের কিছু থান কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বোমাগুলো এক জায়গায় করে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। আর নিহত জঙ্গির মধ্যে আশরাফুল ও আল আমিন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি।  

আশরাফুল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়া সে আইসিটি বিষয়ে বিশেষভাবে পারদর্শী এবং বড় মাপের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন জঙ্গি। জঙ্গি আস্তানায় আত্মসমর্পণকারী সাজ্জাদের মেয়ে সুমাইয়াও পুলিশকে এমন তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল আরিফ।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাতেই সুমাইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরপরে তার দেওয়া প্রাথমিক তথ্য থেকে জঙ্গি আশরাফুলের বিষয়টি জানা গেছে। নিহত জঙ্গি আশরাফুলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবিপুর গ্রামে। সে বহিরাগত জঙ্গি হিসেবে ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল। নিহতের মধ্যে সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে জানান রাজশাহী রেঞ্জের শীর্ষ পর্যায়ের এ কর্মকর্তা।  
 
অভিযান সমাপ্ত হওয়ায় ওই এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এখনও বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করছে। এছাড়া পিবিআই’র সদস্যরাও রয়েছেন। তাই অভিযান শেষ হলেও বাড়িটি জেলা পুলিশ কর্ডন করে রাখবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের বেনীপুর মাছমারা গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ। সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে আস্তানা থেকে বের হয়ে সাজ্জাদসহ ওই বাড়িতে থাকা পাঁচ জঙ্গি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মাহুতি দেন।

পরে আত্মসমর্পণ করেন সাজ্জাদের আরেক মেয়ে সুমাইয়া বেগম। আস্তানা থেকে সুমাইয়ার ছেলে জোবায়ের (০৮) ও আতিয়া (৩ মাস) নামের দুই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। সুমাইয়ার স্বামী জঙ্গি জহুরুল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ অভিযান চালানো হয়।

নিহত একই পরিবারের জঙ্গিরা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন (৫০), তার স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), ছেলে আল আমিন (১৮), মেয়ে কারিমা খাতুন (২৪)। বহিরাগত জঙ্গি আশরাফুল (২৪)। তবে সাজ্জাদের বড় ছেলে সোয়ায়েব ওই বাড়িতে ছিল বলে ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।  

রাজশাহীর সহকারী পুলিশ সুপার (গোদাগাড়ী সদর সার্কেল) একরামুল হক জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের সময় রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী, গোদাগাড়ী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) উৎপল কুমার ও কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম আহত হন।

এর আগে আত্মঘাতী বোমা শরীরে বেঁধে জঙ্গিরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা গোদাগাড়ী সাব-স্টেশনের ফায়ার সার্ভিস কর্মী আবদুল মতিনকে (৪৯) বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।  

আবদুল মতিন গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের ভাটা গ্রামের মৃত এহসান আলীর ছেলে। জানাজা শেষে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহিষালবাড়ি গোরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদানের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।  

বেনীপুর জঙ্গি আস্তানা থেকে ১১ বোমা ও পিস্তল উদ্ধার
অপারেশন ‘সান ডেভিলে’ এখন বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল
বেনীপুরে থমথমে পরিবেশ, ধানক্ষেতে জঙ্গিদের মরদেহ

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৭/আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা
এসএস/বিএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।