ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য মাত্র ২৫২!

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য মাত্র ২৫২! সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে অধ্যয়নে মগ্ন শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার বা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সদস্য সংখ্যা ‘মাত্র’ ২৫২ জন। তাহলে সারা দেশের অন্য ৬৯টি গণগ্রন্থাগারের অবস্থা কি হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। তবু সদস্য সংখ্যা বাড়াতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, দুই ধরনের সদস্যপদ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে। ১৮ বছরের কম বয়সীরা শিশু কর্নারের জন্য সদস্য হতে পারে।

আর ১৮ বছরের বেশি বয়সীরাও সাধারণ কর্নারের জন্য সদস্য হতে পারেন। এক্ষেত্রে ৫শ’ টাকা ফেরতযোগ্য ফি দিয়ে আজীবন সদস্য হওয়া যায়।  

এ প্রক্রিয়ায় ফরম পূরণ করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয়। আর সদস্য পদ বাতিলের জন্য আবেদন করলে, তা গ্রহণ করে ৫শ’ টাকার চেক দেওয়া হয়। যা ব্যাংকে জমা দিয়ে তুলে নেওয়া যায়।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, এতে একটু দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। যে কারণে অনেকেই সদস্য হতে চান না। কেননা, সদস্য না হলেও এখানে পড়তে আসায় কোনো বাধা নেই। সদস্য সংখ্যা কম হওয়ার এটা একটা বড় কারণ।
 
সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার।  ছবি: বাংলানিউজএছাড়া সদস্য সংখ্যা বাড়ালে কি ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে কোনো প্রচারণাও নেই। ফলে অনেকে সচেতনও না। গণগ্রন্থাগারের সদস্য হলে ১৫ দিনের জন্য বই ধার নেওয়া যায়। তবে এর চেয়ে বেশি দিন কেউ নিজের কাছে বই রাখলে প্রতিদিনের জন্য ১০ টাকা করে ফি দিতে হয়।
 
কর্মকর্তারা বলছেন, এখানেও আবার সমস্যা রয়েছে। ৫শ’ টাকার চেয়ে বেশি মূল্যের বই ধার দেওয়া হয় না। ফলে অনেকেই সদস্য হতে অনুৎসাহিত হন।
 
অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফাতেমা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ২ লাখ ৬ হাজার ৯শ’ বই রয়েছে। এতে একটা কপি রাখা হয়েছে পাঠকক্ষে বসে পড়ার জন্য, আরেক কপি ধার দেওয়ার জন্য। কাজেই প্রায় ১ লাখ বই আছে ধার দেওয়ার জন্য। তাই কাউকে সদস্য করে নিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
 
গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশিষ কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, সদস্য কম হলেও আমাদের পাঠক কিন্তু তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। রেজিস্ট্রার খাতার দৈনিক উপস্থিতির হিসাব অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারে ২০১৫ সালে পাঠক সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৭৪ হাজার জন। ২০১৬ সালে তা  বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার। এ বছর আরো বাড়বে বলে আশা করি।  
সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে রাখা বাংলাদেশের সংবিধান।  ছবি: বাংলানিউজএটা ঠিক, পাঠককে গ্রন্থাগারমুখী করতে বা নতুন পাঠক তৈরি করতে তেমন কোনো প্রচারণা নেই। তবে আমরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু প্রচারণা চালিয়ে থাকি। কিন্তু পাঠককে গ্রন্থাগারমুখী করতে আমাদের আলাদা কোনো প্রচারণা নেই। এছাড়া আমরা এখন লাইব্রেরিকেই পাঠকের দোরগোড়ায় নিতে চাচ্ছি। ইতিমধ্যে ১৩ কোটি টাকা বর‍াদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ওরা মোট ৪৯টি গাড়িতে বর্তমানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটা ৭৬ করা হবে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছোট গাড়িগুলোতে ৬ হাজার, আর বড় গাড়িগুলোতে ১৮ হাজার বই আছে। প্রতিটি গাড়িতে আমরা ১ হাজার ৮শ’ বই দিচ্ছি। আর এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনাও আমরা নিচ্ছি।  
 
তিনি আরো বলেন, গণগ্রন্থাগারের সদস্য হওয়ার বিষয়টিকে আমরাও আরো সহজ করার পরিকল্পনা করছি। এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করার একটা প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে সদস্য হওয়ার ঝামেলা কিছুটা কমে যাবে।
 
যারা সদস্য তাদেরও কিছু সমস্যা রয়েছে। আগে বেশি মূল্যের বই দেওয়া হতো। কিন্তু অনেকেই তা নিয়ে আর ফেরত দেন না। তাই ৫শ’ টাকার বেশি মূল্যের বই আর আমরা দিতে চাই না। অনেকে আবার বই লুকিয়ে নিয়ে যান। আমাদের লোকেরা দেহ তল্লাশী করলে ধরাও পড়েন। কাজেই অভ্যাসটা পাঠককেও বদলাতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ