ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাওরে এবার ধানের ক্ষতি সাড়ে ছয় লাখ টন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
হাওরে এবার ধানের ক্ষতি সাড়ে ছয় লাখ টন বাংলানিউজের সাথে সাক্ষাৎকারের কথা বলছেন ড. শামসুল আলম। ছবি- দীপু মালাকার

ঢাকা: সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) প্রণয়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এক কথায় বাংলাদেশের যেকোনো পরিকল্পনায় সম্মুখভাগ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে জিইডি। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জিইডি সদস্য(সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

বৃহস্পতিবার বিকেলে (২৭ এপ্রিল) শেরে বাংলানগর পরিকল্পনা কমিশনে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মফিজুল সাদিক । দু’পর্বের সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব পড়ুন:

বাংলানিউজ: বন্যায় হাওরে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতো? জাতীয় পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব আছে কি?
 
ড. শামসুল আলম: বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাওর।

তার মধ্যে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ‍দুই কোটি লোক। ফসল নষ্ট হয়েছে ধানের হিসেবে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন। আমাদের দেশে মোট বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৯৫ লাখ টন। সেই হিসেবে এটা জাতীয়ভাবে খুব বড় রকমের অর্থনীতির ক্ষতির কারণ হবে না।   তবে আমরা আশা করছি ১ কোটি ৯০ লাখ টন ধান পাবো সারাদেশ থেকে। কারণ ধানের বড় এলাকাগুলো খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বিশেষ করে জামালপুর, শেরপুর, নওগাঁ, বরেন্দ্র এলাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, কুষ্টিয়া,যশোর ও খুলনা বেল্টে সব কিছুই অক্ষত আছে। কাজেই জাতীয়ভাবে দুশ্চিন্তার বড় কোনো কারণ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে এটা চরম ক্ষতি করেছে। আশা করছি, হাওরবাসী এটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আমাদের দেশের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে খুবই পারদর্শী। এটা নিয়ে ভেঙ্গে পড়ার কোনো কারণ নেই। এখন আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো ও পরামর্শ দেয়া।
 
বাংলানিউজ: হাওরের চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। বিকল্প কৃষিকাজের জন্য তেমন কোনো পদ্ধতি আছে কি?
 
ড. শামসুল আলম: হাওরে কৃষি ব্যবস্থাকে পুনর্বহাল করা যায়। এখনও বাড়িঘর তো রয়ে গেছে। এর পাশে নানান ধরনের সবজি চাষ করা যায়। কারণ তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সবজি পাওয়া যায়। লাল শাক, পুঁই শাক, ঢেঁড়স, ডাঁটা শাক এগুলো দ্রুত পাওয়া যায়। পানির মধ্যেও কচুরিপানার উপরে খড় বিছিয়ে নানা ধরনের শাক-সবজি চাষ করা যায়। ১৫ সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত বিআর-২২ ও বিআর-২৩ ধান চাষ করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বীজের প্রয়োজন হবে। তবে হাওরবাসীর হাতে তো ধানবীজ নেই। তবে বিএডিসি(বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) ১৬ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন ধানবীজ প্রতি বছর মজুদ করে। ১২ হাজার টন বীজ মার্কেটে ছেড়ে দেয় বিএডিসি। তবে কিছু বীজ আপদকালীন মজুদ হিসাবে রাখে বিএডিসি। এই মজুদ করা বীজ হাওরের কৃষকদের কাছে সরবরাহ করতে হবে দ্রুততম সময়ে।

দু’পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব পড়ুন...

বীজতলা করার জন্য সরকারের প্রায় ৭০টি হর্টিকালচার সেন্টার রয়েছে। সরকারি খামারও রয়েছে। এগুলোকে আপদকালে কাজে লাগাতে হবে। বিআর-২২ এবং বিআর-২৩ সেপ্টেম্বরের আগেই হাওরে পৌঁছে দিতে হবে। কারণ এই সময়ে হাওরের অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে যাবে। হাওর এলাকায় পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
বাংলানিউজের সাথে সাক্ষাৎকারের কথা বলছেন ড. শামসুল আলম।  ছবি- দীপু মালাকার
বাংলানিউজ: হাওরে বাঁধ নির্মাণে নতুন করে কিছু ভাবতে হবে কি?

 
ড. শামসুল আলম: হাওরে দীর্ঘ মেয়াদি সমুদয় পানি ব্যবস্থাপনাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। যে বাঁধগুলো আছে সেগুলোকে আরও উঁচু, আরও মজবুতি করতে হবে। বর্তমানে যে বাঁধগুলো আছে সেগুলো ছয় থেকে নয় মিটার উঁচু। এগুলো প্রত্যেকটি সাড়ে নয় থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু করতে হবে। বাঁধ উঁচু করাই যথেষ্ট নয়। প্রত্যেক বছর এগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে।   সব সময় বাঁধগুলোর তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁধগুলোকে কৃষকরা অনেক সময় মাছচাষের জন্য কেটে ফেলেন। মাছ চাষের পানি ঢোকানোর জন্যই বাঁধগুলো কেটে ফেলা হয়। ফসল মাঠ থেকে আনার জন্য অনেকে বাঁধ কেটে ফেলেন। অনেক সময় বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়। যেটা করা  খুবই অন্যায় ও অনুচিত। এই বিষয়গুলো স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দেখা দরকার। হাওর এলাকা নিয়ে আমাদের একটা সামাজিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে।
 
অনেক হাওর নদীর সঙ্গে যুক্ত। পলি পড়ে এগুলো উঁচু হয়ে গেছে। ফলে পানি সরাসরি চলে না গিয়ে বাঁধে চাপ সৃষ্টি করে। কাজেই খুব পরিকল্পিতভাবে নদীগুলোর ক্যাপিটাল ড্রেইজিং করতে হবে। হাওরে মাছের যেসব প্রজননক্ষেত্র আছে, লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো যেন ধ্বংস না হয়ে যায়।
 
বাংলানিউজ: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
 
ড. শামসুল আলম: বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এমআইএস/জেএম

** শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনায় হাওর ব্যবস্থাপনা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।