ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ময়নাতদন্তের জন্য রামেকে এসি সাব্বিরের মরদেহ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
ময়নাতদন্তের জন্য রামেকে এসি সাব্বিরের মরদেহ সহকারী কমিশনার (এসি) সাব্বির আহমেদ সরফরাজ

রাজশাহী: রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অফিসার্স মেসে সহকারী কমিশনার (এসি) সাব্বির আহমেদ সরফরাজের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এরপর শনিবার (২৯ এপ্রিল ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির আগে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে রাজশাহী আসেন তার বাবা পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এম ওবাইদুল্লাহ। তার সঙ্গে সাব্বিরের মা ফাতেমা বেগমও আসেন।

আরএমপি’র মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা সাব্বিরের বাবা-মা আসার পরই তার মরদেহ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামানো হয়। যেহেতু তার বাবা পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন, সেহেতু তার উপস্থিতিতেই ছেলের মরদেহটি নামানো হয়। এতে তিনিও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, অফিসার্স মেসে আসার পর তার বাবা-মা ছেলের মরদেহ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার বাবা রাজশাহী আসার আগেই বলেছিলেন তিনি না আসার আগে যেন, মরদেহ নামানো না হয়। পুলিশ সেই কাজটিই করেছে। বর্তমানে মহানগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ তার মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছে। তাদের সঙ্গে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিউটও ঘটনাস্থলে ছিল। কক্ষটি থেকে সিআইডির ওই ইউনিটও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে।  

এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি আমাদের কাছে খুবই দুঃখজনক। তবে প্রাথমিকভাবে যেসব আলমত মিলছে, তাতে সাব্বির আহমেদ সরফরাজ আত্মহত্যাই করেছেন বলে মনে হচ্ছে। এরপরও প্রকৃত ঘটনা বের করার জন্য তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটও কাজ করছে।  

সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সাব্বিরের বাবার সিদ্ধান্তেই তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান আরএমপির মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম।

আরএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, উপ-কমিশনার (সদর) তানভির হায়দার চৌধুরীসহ নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মহানগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা এসি সাব্বিরের মরদেহ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর প্রাথমিকভাবে তারাও বলেন যে, সরফরাজ আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কোনো আলমত তাদের নজরে আসেনি।  

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আরএমপি’র অফিসার্স মেসে এসি সাব্বিরের মরদেহ পাওয়া যায়। দরজা ভেঙে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রাজশাহী মহানগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।  

সেসময় আরএমপি’র মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বলেন, সাব্বিরের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে হলেও মহনগরীর উপশহরেও তাদের বাসা রয়েছে। তবে রাতের ডিউটি শেষে তিনি মাঝেমধ্যেই অফিসার্স মেসে তার নিজের কক্ষে এসে ঘুমাতেন। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রাতেও তিনি ওই কক্ষে ঘুমাতে যান।  

তবে শনিবার সকালে দীর্ঘ সময় গড়িয়ে যাওয়ার পরও ঘুম থেকে না ওঠায় অফিসার্স মেসের অন্য কর্মকর্তারা তাকে ডাকাডাকি করেন।  

অনেকক্ষণ সাড়া-শব্দ না পেয়ে মেস থেকে আরএমপি কমিশনার ও উপ-কমিশনারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানানো হয়। তারা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে সাব্বিরের কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গলায় লাইলনের দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। তার মরদেহ কক্ষের ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে লাগানো ছিল।

এদিকে, উচ্চশিক্ষিত একজন ছেলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ঠিক কী কারণে সুরক্ষিত একটি জায়গায় গলায় ফাঁস দিয়েছেন— আর যদি আত্মহত্যাই করেন তবে তার কারণ কী হতে পারে— তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সাংসারিক জীবনে সাব্বির এক শিশুকন্যার বাবা। তার স্ত্রী একজন চিকিৎসক।     

সরফরাজ ৩১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। তিনি আরএমপি’র রাজপাড়া জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।