ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তিস্তার চরে বাদাম চাষ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
তিস্তার চরে বাদাম চাষ তিস্তার চরে বাদাম চাষ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর ধু ধু বালুচর এখন সবুজে ছেয়ে গেছে। দিগন্ত জোড়া মাঠে চাষ করা হয়েছে বাদাম। কঠোর পরিশ্রম করে বালুচরে স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।

বিগত বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুরোদমে চলছে বাদাম ক্ষেত পরিচর্যা। কাক ডাকা ভোর থেকে গোধূলী বেলা পর্যন্ত পরিবারের সব সদস্য কাজ করছেন বাদাম ক্ষেতে।

বাদামের চাড়া যতো বড় হচ্ছে, স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষাও ততো বাড়ছে কৃষক পরিবারে। বর্তমানে চলছে নিড়ানি আর সেচ কাজ।

ক্ষেতে সেচ দেয়াটা খুব কষ্টকর চরাঞ্চলের চাষিদের। সপ্তাহের দুই থেকে তিনদিন সেচ দিতে হয় চরাঞ্চলের ক্ষেতে। শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি তুলে বিশেষ পলিথিন পাইপ দিয়ে পানি দিতে হয় শস্য ক্ষেতে।

তবে পরিশ্রমে ক্লান্তি নেই এ অঞ্চলের চাষিদের। ফসল ঘরে তুলতে পারলে পরিশ্রমের কষ্ট নিমিষেই ভুলে যান তারা। তাদের কাছে জীবন মানে প্রকৃতির সঙ্গে নিত্য লড়াই করা।  

চাষিরা জানান, তিস্তার দুই তীরে সেচ সুবিধা পেলে চরাঞ্চলে সবুজের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।  

তাই নদীটি শাসন করে গতিপথ নির্ধারণ করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার দাবি তাদের অনেকদিনের।

শুধু চরাঞ্চলেই নয় তুলনামূলক উঁচু জমিতেও বাদাম চাষ করেছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাদামের আবাদ ভালো হয়েছে। আর এক মাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের পাশাপাশি মুনাফা বেশি হবে বলে আশা করছেন বাদাম চাষিরা। তিস্তার চরে বাদাম চাষ

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় এক হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে এক হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও হাতীবান্ধা উপজেলায়। তবে সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের তিস্তা তীরের পুরোটা জুড়েই হয়েছে বাদাম চাষ।

রাজপুর এলাকার চাষি আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিস্তার চরে জেগে ওঠা এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন তিনি। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর বাদাম আবাদ ভালো হয়েছে। বীজ বপন করে সেচ, সামান্য সার আর নিড়ানি দিলে তিন মাসেই বাদাম ঘরে তোলা যায়।

একই এলাকার কৃষক তমিজ উদ্দিন গেলো বছর ৫৪ শতাংশ জমির বাদাম বিক্রির টাকায় ধুমধাম করেই বিয়ে দিয়েছেন একমাত্র মেয়ে ছকিনার। এ বছরও ওই জমিতে বাদাম চাষ করেছেন তিনি।

হাতীবান্ধার গোতামারীর চাষি আজিজুল ও আলকাছ উদ্দিন জানান, বিগত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাদাম চাষ করছেন তারা। কম খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ায় বাদাম চাষেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা।

আদিতমারী উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এম এম জামান শাহীন বাংলানিউজকে জানান, বাদাম ক্ষেতে পোকার আক্রমণ এবার কম। ফসল ভালো রাখতে করণীয় সম্পর্কে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভূষণ রায় বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লালমনিরহাটের চরাঞ্চলসহ অনেক এলাকায় বাদাম চাষ হয়েছে। আশা করি, এবার ফলনও বেশ ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।