ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বিচারক ও আইনজীবীদের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
‘বিচারক ও আইনজীবীদের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে’ আমন্ত্রিতদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: শুধু আইন করে, অবকাঠামো সুবিধা করে বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি কমানো সম্ভব নয়— এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচারক ও আইনজীবীদের আরও মানবিক ও জনগণের প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।

শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

দুস্থ, অসহায়, দরিদ্রদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থের অভাবে বিচার পাবে না বা আইনি সহায়তা পাবে না এটাতো হতে পারে না।


 
বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন ও নিজের কারাভোগের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কারাগারের সঙ্গে আমাদের একটা সর্ম্পকই ছিলো, কাজেই সেখানে কত মানুষ বিচার না পেয়ে দিনের পর দিন কারাগারে বন্দি অবস্থায় আছে...। হয়তো তারা জানেই না, বোঝেই না কিভাবে আইনগত সহায়তা পেতে পারে। বছরের পর বছর কারাগারে পড়ে আছে বিনা বিচারে। সেই রকম আত্মীয় স্বজন বা আর্থিক সচ্ছলতা নেই যাদের, তারা আইনি সহায়তা পাবে।  
 
‘আবার আমরা দেখি সামাজিকভাবে নানাভাবে নির্যাতিত হয়, বিশেষ করে মেয়েরা। ’
 
বঞ্চিত মানুষকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুস্থ, অসহায়, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো যেন ন্যায়বিচার পেতে পারেন, সে বিচারের পথ সুগম করার জন্য আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ পাস করি।
 
২০০১ পরবর্তী বিএনপি আমলে এটি বাস্তবায়ন না হলেও ২০০৯ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার আইনটি কার্যকর করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুস্থ অসহায় মানুষ যারা, তারা এর সুফল ভোগ করছেন।
 
দেশব্যাপী আইনগত সহায়তা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে দেওয়া আইনি সহায়তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৮ বছরে সোয়া ২ লাখ নারী, শিশু ও পুরুষকে সরকারি খরচে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে সাড়ে ৪৬ হাজার মামলা। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেই সাড়ে ৩ কোটি টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।  
বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিস্বাধীন নিরপেক্ষ, আধুনিক বিচার ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।  
 
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ৭৫ পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের সময়কার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‌আসলে পেছনের দরজা দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে, অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করে তারা সবসময় এভাবেই, যারা জনগণের নেতৃত্বে থাকে তাদের বন্দি করে, মামলা দেয়, তাদের কণ্ঠকে দাবিয়ে রাখে। ’
 
‘জনগণের কথা যেন কেউ বলতে না পারে সেই ব্যবস্থাই তারা করে। অবৈধভাবে উপার্জিত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত বা নিষ্কণ্টক করার জন্য খুন খারাবি থেকে শুরু করে নানা ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। ’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। খুনি, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা নয়। জনগণই মালিক, জনগণই সর্বক্ষমতার অধিকারী। ’
 
দেশের মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করতে যা যা প্রয়োজন সরকার সব করে যাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
 
বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণাটা কী তা প্রধানমন্ত্রীর নিজের চেয়ে আর কেউ বেশি বোধ হয় জানে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে তাদের দায় মুক্তি দিতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। ’
 
সব বিভাগেরই কিন্তু ক্ষমতা কম না
আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের কাজের সমন্বয়ের ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
শেখ হাসিনা বলেন, সব বিভাগেরই কিন্তু ক্ষমতা কম নয়। আমরা তো আইন প্রণয়ন করি। আইন প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ, আর এটা কার্যকর করার ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগ। কাজেই কেউ এককভাবে চলতে পারবেন না। চলতে হলে সবাইকে নিয়েই সমঝোতা রেখেই চলতে হয়।
 
‘একটি আরেকটিকে দোষারোপ করে একটা রাষ্ট্র কোনোদিনই সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। এ বিষয়কে সবার সচেতন থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। ’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কথাটা যদি আবার কেউ ভুলে যেয়ে কেউ যদি মনে করেন, এখানে আমার ক্ষমতাটা আমিই সবটুকু প্রয়োগ করে ফেলবো। প্রয়োগটা করবেটা কে? তার জন্য তো কাউকে লাগবে, এই কথাটা কেউ যেন ভুলে না যায়। সবাইকে নিয়েই কিন্তু রাষ্ট্রটা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
এমইউএম/এসএইচ/এইচএ/

আরও পড়ুন
** ‘অর্থাভাবে বিচার পাবে না, এটাতো হতে পারে না’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।