ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আগেই ভালো ছিলো, খামোখা…

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
আগেই ভালো ছিলো, খামোখা… রাজধানীতে চলছে নামসর্বস্ব সিটিং বাস

ঢাকা: যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের যেমন ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য থাকে না, বিজয়ীর খেয়াল-খুশির ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে সবকিছু, আইন নিয়ে কথা তুলবার কোনো জো থাকে না। তেমন পরিস্থিতি হয়েছে রাজধানীর গণপরিবহনের যাত্রীদের।

আগে তবু প্রতিবাদ করলে ভয় পেতো বাস শ্রমিকরা। এখন কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না।

যার যা খুশি তাই করছে, যার যা খুশি ভাড়া আদায় করছে। আগে যারা লোকাল ছিলো তারাও এখন সিটিং হয়ে গেছে। আবার দাঁড়িয়ে লোক নিচ্ছে তবুও সিটিংয়ের মতো ভাড়া আদায় করছে!

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললেন নজরুল ইসলাম। চাকরি করেন বনানী এলাকার একটি গার্মেন্টের প্রশাসন বিভাগে। মহাখালী থেকে বনানী পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়েছে ১০ টাকা। আগেও এই বলাকা বাসে অনেকবার যাতায়াত করেছেন ৫ টাকা দিয়েই।

নজরুল ইসলাম বলেন, এখন লোকজন প্রতিবাদ করার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে মনে হয়। আগে আশা ছিলো অভিযোগ দিলে হয়তো শাস্তি হতে পারে। সে কারণে যাত্রীরা আশায় বুক বাঁধতাম। আর বাস শ্রমিকরাও ভয় পেতো, না জানি অভিযোগ দিলে কী শাস্তি হয়। খামোখা কেনো এই কাজটা করতে গেলো সরকার। আর যখন করলো তাহলে কেনো পিছিয়ে এলো।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৯টায় যাত্রীবেশে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা নজরুল ইসলামের সঙ্গে দারুণভাবে মিলে যায়। মগবাজার থেকে ওঠার সময় হেলপার হাঁক দিলেন সিটিং সিটিং বলে। বনানীর ভাড়া চাইলেন বিশ টাকা। আগে যেখানে ১০ টাকা করে আদায় করা হতো।

তেজগাঁও সাতরাস্তায় গিয়ে নামলেন একজন যাত্রী। আর হুড়হুড় করে উঠলেন ৪ জন। ওঠার সময় হেলপার বা ড্রাইভার কিছুই বললেন না। দাঁড়িয়ে থাকলেন ৩ জন। দাঁড়ানো যাত্রী নিয়ে গাড়িতে থাকা এক যাত্রী মৃদু আপত্তি করলেন। সঙ্গে সঙ্গে হেলপার বললেন, জোর করে উঠলে আমাদের করার কী আছে?

একইভাবে মহাখালীতে গিয়ে পাঁচজন নামলেন। এবারও দাঁড়িয়ে থাকলেন দু’জন। এবার আর কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা গেলো না। কিন্তু যিনি দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করলেন তার কাছ থেকেও সিটিং ভাড়া আদায় করা হলো।

মহাখালীতে উঠলেন লিটন নামে এক ভদ্রলোক। যাবেন চেয়ারম্যানবাড়ি।   দশ টাকার নোট দিয়ে ফেরত চাইলেন পাঁচ টাকা।   সুপারভাইজার সুমন বললেন, দশ টাকাই ভাড়া। এবার যাত্রীটি বললেন আমি ঘণ্টাখানেক আগে বলাকা সার্ভিসের বাসেই চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে মহাখালী এসেছি পাঁচ টাকায়। এক ঘণ্টার মধ্যে ভাড়া বেড়ে গেলো! সুপারভাইজার কোনো জবাব না দিয়ে অন্যযাত্রীর ভাড়া তোলায় মনোযোগ দিলেন।

সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী বলাকা সার্ভিসের বাসগুলো আগে ছিলো পুরোপুরি লোকাল। এখনও কতগুলো লোকাল, কতগুলো সিটিং হয়ে গেছে। সিটিংয়ের মধ্যেও রয়েছে ফাঁকিবাজি। রাস্তায় যাত্রী কম দেখলে হঠাৎ করে সিটিং হয়ে যাচ্ছে। আবার সুযোগ বুঝে যাত্রী তোলা হচ্ছে গাদাগাদি করে। কোথাও লেখা নেই। সিটিং না লোকাল।

শুধু বলাকা সার্ভিস নয়, বাসাবো-বসিলা রুটে চলাচলকারী মহালোকাল স্বাধীন পরিবহন, গাজীপুর গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী সুপ্রভাত, গাবতলী মিনিবাস মালিক সমিতির ৭ ও ৮ নম্বর বাস, মিরপুর-বাড্ডা রুটের আকিক পরিবহন, জাবালে নূর সবাই ইচ্ছামতো সিটিং সাজছে। বিশেষ করে অফিস আওয়ারে যখন যাত্রীর চাপ বেশি তখন হঠা‍ৎ করে সিটিং ঘোষণা দিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এসআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।