ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কী করে হয় জঙ্গি বিরোধী অপারেশনের নামকরণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭
কী করে হয় জঙ্গি বিরোধী অপারেশনের নামকরণ চাঁপাইয়ে জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘ঈগল হান্ট’

ঢাকা: জঙ্গি বিরোধী অপারেশনগুলোর নামকরণ এখন অনেকটা নিয়মিত বিষয়েই পরিণত হয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার সময় থেকেই মূলত এই নামকরণের চল শুরু হয়। সর্বশেষ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঈগল হান্ট’।

এসব নামকরণের স্বত:সিদ্ধ কোনো নিয়ম না থাকলেও পরিবেশ-পরিস্থিতি, ঘটনার গতি-প্রকৃতি, সময় ও ঘটনাস্থলের ভৌগলিক গুরুত্ব বিবেচনায় নেওয়া হয়। তবে নামকরণের শব্দ বাছাই অনেকটা কৌশল হিসেবে কাজ করে বলে অভিযান পরিচালনাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

তবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিকল্পিত অভিযানগুলোরই কেবল নাম দেওয়া হয়। জঙ্গিরা হঠাৎ আক্রমণ চালিয়ে বসলে প্রতিরোধ গড়ার কোনো নাম থাকে না। এ কারণেই শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় কোনো নামকরণ হয়নি।
 
অভিযানের নামকরণ জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্তি ও তৎপরতা বাড়াতে সহায়ক হয় বলে মনে করেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। তারা বলেন, নামকরণ দেখে অভিযান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর গুরুত্ব বুঝতে পারেন। কার্যত এটা কোড নেম। তাৎক্ষণিকভাবে পরিচালিত অভিযানে এই কোড নেম ব্যবহৃত হলেও বড় অভিযানগুলোর নামকরণ অনেকটাই হয় পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায়।
 
এ প্রসঙ্গে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, এই নামকরণের কোনো সজ্ঞা নাই। কোনো ফর্মুলাও নাই। আমরা অপারেশনে গেলে সবসময়ই একটি কোড নেম ব্যবহার করি। সে কারণেই এ নামকরণ।
 
তবে পরিস্থিতি ও আঞ্চলিকতা বা অপারেশনের মাত্রা বুঝে এসব নামকরণ করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি নামেরই একটি করে অর্থ থাকে।
 
এ পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানগুলোর মধ্যে গুলশানের হলি আর্টিজান ও সিলেটের আতিয়া মহলে সরাসরি সেনাবাহিনী অংশ নিলেও বাকিগুলো পরিচালনা করেছে পুলিশ, ৠব, সোয়াত বা সিটিটিসি। অনেক ক্ষেত্রে একাধিক বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ড’। ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে পরিচালিত অভিযানের নাম ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ দেয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় এই ইউনিট পরিচালিত অপারেশনের নাম ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭ ’। ৮ অক্টোবর গাজীপুরের পাতারটেকে অভিযানের নাম ‘অপারেশন স্পেইট এইট’। ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের নাম ‘অপারেশন রিপল ২৪’।
 
তবে শোলাকিয়ার মতোই ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের রূপনগরে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানেরও কোনো নাম ছিলো না। একই ভাবে নাম ছিলো না ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে পরিচালিত কাউন্টার টেররিজম ইউনিট পরিচালিত অভিযানের। ৮ অক্টোবর আশুলিয়া ও টাঙ্গাইলে র‍্যাব পরিচালিত দুটি অভিযানেরও নামকরণের কথা শোনা যায়নি।
 
চলতি বছরের ১৭ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে  ‘অপারেশন অ্যাসল্ট ১৬’ চালায় পুলিশ-সোয়াতের যৌথ বাহিনী। সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আতিয়া মহলে ২৫ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত  ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ পরিচালনা করে সেনাবাহিনী।
মৌলভীবাজারের নাসিরপুরের পুলিশ পরিচালিত অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন হিটব্যাক’। মৌলভীবাজারের বড়হাটের অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’, কুমিল্লার কোটবাড়ীর অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’।
 
আগামীতেও কোনো জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে নামকরণের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭
এসজেএ/জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।