ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অর্থনৈতিক উন্নয়নেই দেশ উন্নত হবে না, প্রয়োজন আইনের শাসন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
অর্থনৈতিক উন্নয়নেই দেশ উন্নত হবে না, প্রয়োজন আইনের শাসন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

হবিগঞ্জ: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেই দেশ উন্নয়নশীল দেশ হবে না।সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আইনের শাসন।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক উন্নত হয়েছে। দেশে যতো দুর্যোগই আসুক না কেন এখন বাইরের সাহায্য ছাড়াই দেশ তা মোকাবেলা করতে পারে।

 অনেক দেশের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি হলেও তারা উন্নত দেশের মর্যাদা পায় না। এর সঙ্গে আরো অনেক সূচক জড়িত। আইনের শাসন থাকতে হবে।  পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা যাবে, যদি বিচারকদের আইনজীবীরা সহযোগিতা করেন। প্রধান বিচারপতির পক্ষে আইনের শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, যদি সবাই মিলে সহযোগিতা না করেন।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে হবিগঞ্জ বার লাইব্রেরির প্রধান শাখায় জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে প্রধান বিচারপতিকে দেয়া সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মোছাব্বিরের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে সব সরকার। প্রশাসন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায় না। তারা বিচার বিভাগকে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। এটি সম্পূর্ণ ভুল। বিচার বিভাগ সবসময় প্রশাসন ও আইন বিভাগের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। প্রশাসনের লোকজন যখন অবসরে আসেন তখন তাদেরও রক্ষা করে বিচার বিভাগ। চাকরিকালে বিভিন্ন সমস্যায়ও তাদের বিচার বিভাগেই যেতে হয়।

বিজ্ঞান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় দেশ এখন ছোট হয়ে আসছে। পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে এখন পরের দিনই জনগণ তাদের নকল পেয়ে যাচ্ছেন উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য। এখন যে কোনো স্থান থেকেই জনগণ তার মামলার খবর জানতে পারছেন। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এবং জট কমাতে ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নেই। এখন যারা বিচারক হচ্ছেন তারা যেমন উচ্চ শিক্ষিত, তেমনিভাবে ইংরেজি ও কম্পিউটারেও তারা দক্ষ। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে, আমাদের দেড় হাজার বিচারককে তাদের দেশের ভুপালে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য, যোগ করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, বিচারকদের সঙ্গে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। তারা একটি এলাকায় যান অতিথি হিসেবে। যদি কারো সঙ্গে সমস্যা হয় তাহলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে আমাকে জানালে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, জেলা জজ যদি সৎ হয় তাহলে অন্য বিচারকরা অসৎ হতে পারেন না। তাই বর্তমানে সৎ বিচারক ছাড়া কাউকে জেলা জজ করা হয় না। দেশে বর্তমানে আইনের ত্রুটি যেমন আছে, তেমনি আছে মামলা জট। অনেক সময় প্রয়োজনীয় আইন হয় না। তাই রায়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকি, যাতে জনগণের হয়রানি কমে। মনে রাখতে হবে, উন্নত দেশ হতে হলে নাগরিকদের কম খরচে ও সময়ে উন্নত সেবা দিতে হবে।

আমি শুধু প্রধান বিচারপতি নই। আমি একজন প্রথম শ্রেণির নাগরিক। তাই পরিবেশ, রাস্তাঘাটসহ সব সমস্যা আমার চোখে পড়ে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে প্রশাসনের যে দূরত্ব রয়েছে আগামীতে তা কাটিয়ে উঠতে হবে, যোগ করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, হবিগঞ্জে এখন শিল্পায়ন হচ্ছে। কিন্তু তা অপরিকল্পিতভাবে। শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট এলাকা। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ইকনোমিক জোন করতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে শুনেছি, তা কিছু শ্রমিক বাধাগ্রস্থ করেছে। এই জোন বাস্তবায়নে হবিগঞ্জের আইনজীবীদের সহযোগিতা করতে হবে।

প্রধান বিচারপতির কোনো বাজেট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে হবিগঞ্জ আইনজীবী সমিতিকে সবার আগে সহযোগিতা করা হবে।

হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জমশেদ মিয়া ও নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লা, বারের সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই, অ্যাডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখত, অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন, পিপি সিরাজুল হক চৌধুরী ও জিপি আফিল উদ্দিন। এর আগে প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন আদালত পরিদর্শন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।