ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কুকুরের আবাসস্থল ২০ শয্যা হাসপাতাল!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
কুকুরের আবাসস্থল ২০ শয্যা হাসপাতাল! কেরানীগঞ্জ (জিনজিরা) ২০ শয্যা হাসপাতাল। ছবি: বাংলানিউজ

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): কেরানীগঞ্জ (জিনজিরা) ২০ শয্যা হাসপাতালটি উপজেলার জিনজিরা এলাকায় কেরানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থিত। ২০০৪ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

২০০৬ সালের ৭ জুলাই ওই সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন।

দীর্ঘদিন ধরে অজানা কারণে নামে মাত্র টিকে আছে ২০ শয্যার এই হাসপাতাল।

সেখানে নেই কোনো চিকিৎসাসেবা। যে কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে আশেপাশের কয়েক হাজার মানুষ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই হাসপাতালের জন্য প্রায় ২০/২২ জন কর্মচারি নিয়োজিত রয়েছে। যারা পাশ্ববর্তী অন্য হাসপাতালে কাজ করে। এতো কর্মচারি থাকা সত্বেও অযত্নে অবহেলায় হাসপাতালটি কুকুরের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। এদিকে, বিকেলের পর ওই হাসপাতালের মূল ফটকে তালা লাগানো থাকে।

সম্প্রতি সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির চার তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওঠার সময় দেখা যায় একটি কুকুর সিঁড়ি দিয়ে নামছে। পরে দ্বিতীয় তলায় গিয়ে কথা হয় হাসপাতালে অবস্থানরত একমাত্র অফিস সহায়ক সাহিদা বেগমের সঙ্গে। এসময় তার সঙ্গে কথা বলে তৃতীয় তলায় যাওয়ার পথে দেখা যায় সম্পূর্ণ সিঁড়িটির বিভিন্ন স্থানে কুকুরের বিষ্ঠা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পুরো হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় হাসপাতালের কোথাও রোগী ভর্তির জন্য কোনো শয্যা ব্যবস্থা নেই। পরে নিচে নামার সময় দেখা যায় দ্বিতীয় তলার গেইটে তালা দিয়ে অফিস সহায়ক সাহিদা বেগম চলে যাচ্ছেন। হাসপাতালটির চার তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায়  একটি কুকুর সিঁড়ি দিয়ে নামছে। ছবি: বাংলানিউজএসময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের পানির পাম্প নষ্ট থাকায় তিনি গেইটে তালা দিয়ে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছেন। এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হয়না। এখানে শুধু ব্রাক এনজিওর মাধ্যমে যক্ষা রোগের কফ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ডা. রাকিব মাহমুদ স্যার রয়েছেন, তিনি মাঝে মধ্যে আসেন। জিনজিরা এলাকার বাসিন্দা মো. সাহেব আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি কফ পরীক্ষার জন্য একদিন বিকেলে গিয়ে দেখি হাসপাতালের মূল ফটকে তালা। পরের দিন সকালে গিয়ে আমি কফ পরীক্ষা করি। এই হাসপাতালে কফ পরীক্ষা ছাড়া অন্যকোনো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়না। হাসপ‍াতালের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। এছাড়া হাসপাতালের ভেতর কুকুরের আবাসস্থল।

এ বিষয়ে হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিব মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, এই হাসপাতালটি চালুর পর থেকেই এ অবস্থা। আমরা একাধিকবার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ২০ শয্যা হাসপাতালের জন্য কোনো অর্থ এবং ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় হাসপাতাল চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালের নিয়োজিত প্রায় ২০ জন কর্মচারি পাশ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছে। এমনকি আমি নিজেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ডিউটি করছি।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের পানির পাম্প দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। আমি একাধিকবার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পাম্পটি মেরামত করেছিলাম এখন আবার নষ্ট হয়ে গেছে।

হাসপাতালে কুকুর এবং বিষ্ঠা সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে কেউ থাকেনা বিধায় কুকুরের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তাছাড়া হাসপাতালের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাউকে দিয়ে কুকুরের বিষ্ঠা পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়।

বিকেলে হাসপাতালের মূল ফটকে তালা থাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে তিনি বলেন, হাসপাতালে ওষুধ না থাকায় আমরা শুধু বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা দেই। দুপুর ২টার পর বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকে বিধায় মূল ফটকে তালা দেওয়া থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।