ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বরিশালে হানাদার বাহিনীর প্রথম হত্যাযজ্ঞ চরবাড়ীয়ায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
বরিশালে হানাদার বাহিনীর প্রথম হত্যাযজ্ঞ চরবাড়ীয়ায় বরিশালে হানাদার বাহিনীর প্রথম হত্যাযজ্ঞ চরবাড়ীয়ায়

বরিশাল: ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাতের পর দীর্ঘ ১ মাস বরিশাল ছিলো শত্রুমুক্ত। এ সময়ের মধ্যে গঠন হয় সংগ্রাম পরিষদ। শুরু হয়ে যায় মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ।

এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ রোধে বরিশাল শহর অভিমুখী সড়ক ও নৌ-পথে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখে।

১৮ এপ্রিল দুটি পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান শহরে প্রথম রকেট ও মেশিনগানের গুলিবর্ষণ করে।

এরপর ২০ এপ্রিল পুনরায় বিমানগুলো নীচ দিয়ে শহরের উপর দিয়ে উড়ে যায়। শহর জনশূন্য হতে শুরু করে।

বরিশাল শহরের উত্তরে অবস্থিত চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের মহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিলো মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প।
সাক্ষাতকারে জানা যায় আরও অনেক তথ্য (ছবি: বাংলানিউজ)তালতলী বাজারের পাশেই রাস্তা কেটে শহরের সাথে যাতায়াত বিচ্ছিন্ন করা হয়। চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপদে গিয়ে বাংকার খনন করেন আশ্রয়ের জন্য।

নদীপথে পাকিস্তানি বাহিনীর আগমন প্রতিহত করার জন্য শহরের অদূরে ঝুনাহারে একটি শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। আক্রান্ত হলে প্রতিরোধের লক্ষে চরবাড়িয়ার ফকির বাড়ি,শায়েস্তাবাদের রাজাপুর ও হবিনগরে বাঙ্কার তৈরি করা হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২৫ এপ্রিল হঠাৎ খবর পাওয়া যায় ঢাকা থেকে গানবোটে পাকিস্তানি সেনারা বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে।

২৫ এপ্রিল শহীদ আবদুর রহমান খানের ছেলে আবদুল মান্নান সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, গানবোটগুলো স্থানীয় মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ঝুনাহার নদী হয়ে শায়েস্তাবাদ ও চরবাড়ীয়া অতিক্রমকালে মুক্তিযোদ্ধারা এগুলোর উপর গুলিবর্ষণ করে। এ সময় গানবোট থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনারা  ইরানী ও মাজভী নামের দুটি স্টিমার তলিয়ে দেয়। এছাড়া তাদের গুলিতে নদীর তীরবর্তী বাঙ্কার ধ্বংস হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

ঝুনাহারে প্রথম বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যেই দুটি হেলিকপ্টার জঙ্গি বিমানের প্রহরায় তালতলীতে অবতরণ করে ছত্রীসেনা নামিয়ে দেয়। এভাবেই নৌ-বিমান ও স্থলবাহিনীর সমন্বয়ে চরবাড়ীয়া এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথম আক্রমণ শুরু করে ২৫ এপ্রিল।

এ সময় পুরো চরবাড়ীয়া এলাকায় চলে পাক-বাহিনীর পৈশাচিক বর্বরতা। তারা যাত্রাপথে যাদের পেয়েছে তাদেরই হত্যা করেছে। মসজিদের ইমাম, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধা, মায়ের কোলের শিশুসহ সকল ধর্ম, বয়স-পেশার মানুষকে হত্যা করে তারা।

এর মধ্যে তালতলীর পশ্চিম পাশে আব্দুর রহমান খানের নতুন খনন করা পুকুরে আশ্রয় নেয়া বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। চরবাড়ীয়ার রিকশাচালক ছাত্তার রাঢ়ী আত্মরক্ষার জন্য নিজ ঘরের পাশেই খনন করেন একটি পরিখা। সেখানে এক ভিখারীসহ ঘরের সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানে ব্রাশ ফায়ার করে ২ বছরের শিশু, মহিলা, বৃদ্ধাসহ ৮ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের আর কেউ বেঁচে না থাকায় সেখানেই পুরো পরিবারকে গণকবর দিয়ে দেয়া হয়, যা আজ বীর চিরন্তন। এভাবে অনেককেই হত্যা করা হয় ওইদিন। আবার মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান করার খবর পেয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় সাপানিয়ার প্রাচীর ঘেরা বাড়িটি।

চরবাড়ীয়ায় নৃশংসতা চালিয়ে গানবোটগুলোতে পাকিস্তানি ‍সেনারা অগ্রসর হয় বরিশাল শহরের দিকে।

মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবদুল মান্নান জানান, বরিশালের প্রথম নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় এই চরবাড়ীয়া থেকে। এখানেই মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প, পরিখা এবং গণহত্যার নানান স্মৃতি রয়েছে। যেগুলো সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ৭১ এর অনেক জনপদ কীর্তনখোলার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এদিক চরবাড়ীয়ার রণাঙ্গনের ঝুনাহার পয়েন্টে (যেখানে দুটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিলো পাক-হানাদার বাহিনী। এখানেই প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে) স্মৃতিফলক নির্মাণের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা। তবে সে কাজও থমকে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
এমএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।