ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সোনারঙা ফলে ধান নেই, আছে খোলস!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
সোনারঙা ফলে ধান নেই, আছে খোলস! অজানা রোগে চিটা হয়ে যাচ্ছে গাছের ধান। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: কিছুটা এলোমেলো দাঁড়িয়ে থাকা ধান গাছগুলোর মাথা হেলে পড়েছে। ফলশুদ্ধ অনেক শীষ নুয়ে রয়েছে নিচের দিকে। সোনারঙা সেই ফলে ধান নেই, আছে শুধু খোলস!

আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চিটায় পরিণত হয়েছে গাছের ধানগুলো।
 
কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ ফেলে ক্ষেতের গাছগুলো নেড়ে-চেড়ে দেখছিলেন কৃষক মোবারক ওরফে মোবার ও সঞ্জু মিয়া।

দূর থেকে সবকিছু ঠিকঠাক মনে হলেও কাছে গেলেই দৃশ্যটি ধরা দেয় চোখে। আর তখনই বুকের মধ্যে হাহাকার দিয়ে ওঠে। অজান্তেই চোখে চলে আসে পানি।
 
কাঁচা-পাকা কোনো গাছের ফলেই থাকছে না ধান।  ছবি: আরিফ জাহান থেমে থেমে চলা বর্ষণে তলিয়ে গেছে উঠতি অনেক ক্ষেতের ফসলও। নুয়ে পড়েছে ধান গাছগুলো। ফলশুদ্ধ শীষগুলো হাবুডুবু খাচ্ছে পানির তলায়। পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের ফসল। চোখের সামনেই এসব ঘটনা ঘটছে।
 
কৃষক রেজাউল করিম বাবলু পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান গাছের মাথা উঠিয়ে দেখছিলেন। চেষ্টা করছিলেন ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা বোঝার। অবস্থা দেখে দুঃখে-ক্ষোভে একটু সময় ঘোরাঘুরি করে ক্ষেত থেকে উঠে আসেন। ক্ষয়-ক্ষতির বুঝতে ব্যর্থ হয়ে বাড়িমুখি হন এই কৃষক।  
 
শস্যভাণ্ডার খ্যাত বগুড়ার বেশ কয়েকটি উপজেলার কৃষকরা তুলে ধরেন চলতি বোরো মৌসুমের ধানের আবাদের এ করুণ চিত্র।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিঘার পর বিঘা ক্ষেতের ধান গাছে পাক ধরেছে। চারদিকে সোনালী আভা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো। অনেক গাছের ধান এখনো কাঁচা রয়েছে। পরিপক্ক হলেও পাক ধরেনি। কিছু জাতের ধানে ফুল আসা শেষ হয়েছে সবেমাত্র। মাঠে মাঠে চলছে সোনা-সবুজ রঙের খেলা।
 
দূর থেকে দৃশ্যটি উপভোগ্য হলেও ক্ষেতের আইলে পা ফেলতেই চোখে ধরা দেয় ভিন্ন চিত্র। ঝড়ো হাওয়ায় অনেক ক্ষেতের ধান গাছ শুয়ে পড়েছে মাটিতে। বৃষ্টির পানিতে লুটোপুটি খাচ্ছে গাছের মাথা। রোগাক্রান্ত হয়ে চিটা হয়ে গেছে অনেক ক্ষেতের ধান। অনেক শীষ কালো বা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।
 
মোবারক, রেজাউল করিম বাবলু, সঞ্জু মিয়াসহ কৃষকরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘অন্য কোনো কাজ জানা নেই। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কৃষি আমাদের সন্তানতূল্য। বিগত দিনে দামে মার খেয়েছি। কিন্তু ফসল ভালো পেয়েছি’।
 
‘এবার উল্টোটা ঘটছে। মাসখানেক আগে আবহাওয়া ধানের প্রতিকূলে চলে গেছে। সম্প্রতি যোগ হয়েছে বৃষ্টিপাত আর ঝড়ো হাওয়া’।
 
তারা আরো বলেন, ‘গাছে মরণব্যধি ধরেছে। পর্যাপ্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। গাছ ঠিক আছে, শীষ ঠিক আছে। অথচ ক্ষেতের ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। খোলস হয়ে আছে শীষগুলো। কোনোভাবেই তা রোধ করতে পারছি না’।
 
‘আবার অনেক ক্ষেতের ফসল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানের মাথা পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাঁচা হওয়ায় তা ঘরে তোলারও জো নেই। বোরো আবাদ নিয়ে বিপর্যয়ের মুখে আছি’- যোগ করেন এসব কৃষকেরা।
 
পানিতে নিমজ্জিত জমির ধান পচে যাচ্ছে।  ছবি: আরিফ জাহানজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে উফসি ও হাইব্রিড জাতের বোরো চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তবে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা এখনো নিরূপণ করা হয়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।