ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস সোমবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস সোমবার ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস সোমবার

রাজশাহী: ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস সোমবার (২৪ এপ্রিল)। ১৯৫০ সালের এ দিনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সাত কর্মীকে হত্যা করে পাকিস্তানি সিপাহী।

কারা কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহার, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ এবং কারাবিধান চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুযোগ না দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছিলেন রাজবন্দিরা।  

নিহতরা হলেন- কমরেড বিজন সেন (রাজশাহী), কম্পরাম সিং (দিনাজপুর), আনোয়ার হোসেন (খুলনা), সুধীন ধর (রংপুর), হানিফ শেখ (কুষ্টিয়া), সুখেন ভট্টাচার্য (ময়মনসিংহ), দেলোয়ার হোসেন (কুষ্টিয়া)।

খাপড়া ওয়ার্ডে ওই বর্বর আক্রমণে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন ৩১জন রাজবন্দি।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে দ্বিতীয় প্রাচীর ঘেরা খাপড়া ওয়ার্ড। কারাগারের ভেতর কারাগার। ওয়ার্ড মানে নির্দিষ্ট চতুষ্কোণাকৃতি একখানা বেশ বড় ঘর। টালির ছাউনি থাকায় রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় বলা হত ‘খাপড়া’। খাপড়া ওয়ার্ডে ওই সময় বন্দির সংখ্যা ছিল ৪১।

১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল, সেদিনও ছিল সোমবার। সারারাত মিটিংয়ের পর সকাল ৯টায় কমরেডরা আবার আলোচনায় বসলে জেল সুপার বিল সরাসরি ঢুকে পড়েন খাপড়া ওয়ার্ডে। জেল সুপার রাজবন্দিদের ১৪ নম্বর সেলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। কমরেড আবদুল হক বিলকে এ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে গেলেই জেল সুপার চিৎকার করে ‘খাপড়া’র দরজা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ দেওয়ার পরই বিল দৌড়ে বের হয়ে যেতে চাইলে তার পথরোধ করে দাঁড়ান কমরেড বাবর আলী, দেলোয়ার ও রশীদ উদ্দীন।  

বিল হান্টারের আঘাতে বাবর আলীর কব্জি ভেঙে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে হুইসিল বাজান। সঙ্গে সঙ্গে চল্লিশজন সশস্ত্র সিপাহী ঘিরে ফেলে খাপড়া ওয়ার্ড। ‘খাপড়া’র ভেতরে সে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হয়, মূল দরজায় প্রতিরোধ রাখতে হবে। কমরেড প্রসাদ রায় ছুটে গিয়ে ‘খাপড়া’র নড়বড়ে দরজায় কাঁধ লাগিয়ে আটকে রাখেন। উল্টো পাশের প্রবল ধাক্কায় দরজা আটকে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।  

বাইরে থেকে লাঠিধারী পুলিশ জানালা দিয়ে লাঠি ছুড়ে মারতে থাকে। নিরস্ত্র রাজবন্দিরা থালা-বাটি, দোয়াত-ওষুধের শিশি ছুড়ে আক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করতে থাকেন। এরই মধ্যে দরজার ফাঁক দিয়ে নল ঢুকিয়ে গুলি চালালে কমরেড প্রসাদ রায়ের বাম ঊরুতে সাতটি বুলেট বিদ্ধ হয়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বৃষ্টির মতো গুলি চালাতে চালাতে ‘খাপড়া’য় ঢুকে পড়ে আর্মড পুলিশ।  

রাইফেলের গর্জনে ফেটে পড়ে কারাগার। রক্তে ভেসে যায় খাপড়া ওয়ার্ড। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে দেয়াল থেকে ছাদ পর্যন্ত লালে লাল হয়ে যায়। সেখানেই ঝরে পড়ে ছয়জন কমরেডের জীবন। নিরস্ত্র ৩৯ জন বন্দির ওপর ১৮০টি গুলি বর্ষণ করা হয়! অবিরাম গুলির পর শুরু হয় তিন দফায় লাঠিচার্জ।

এর মধ্যে একবারের জন্য ‘খাপড়া’য় ঢোকেন বিল। আবদুল হককে খুঁজে বের করে হাতের হান্টার দিয়ে তার মাথায় তীব্র আঘাত করেন। মাথা ফেটে লুটিয়ে পড়েন কমরেড। গুলিবিদ্ধ বিজন সেন চিৎকার করে বলে ওঠেনথ ‘আমরা মরি নাই কমরেড, আমরা বিজয়ী হয়েছি, ভবিষ্যৎ আমাদের। ’ এ কথা বলেই প্রাণ হারান তিনি। হাসপাতালে মারা যান কমরেড কম্পরাম সিং।

দিবসটি উপলক্ষে সোমবার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটির উদ্যোগে খাপড়া ওয়ার্ডের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ১০টায় ৩০ সদস্যের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দল নিয়ে রাজশাহী কারাগারে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করবেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
এসএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad