ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যবস্থা না নিলে মেঘনায় বিলীন হবে হাইমচরের ঈশানবালা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
ব্যবস্থা না নিলে মেঘনায় বিলীন হবে হাইমচরের ঈশানবালা ব্যবস্থা না নিলে মেঘনায় বিলীন হবে হাইমচরের ঈশানবালা

চাঁদপুর: বিগত দুই বছর ধরে মেঘনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের বহু বছরের পুরনো এলাকা ঈশানবালা।

এরই মধ্যে এই এলাকার বহু বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এলাকাটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৬ সালে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ শুরু করে।

কিন্তু সেই কাজ নির্দিষ্ট সময়ে না করায় তা কোনো কাজেই আসেনি। নতুন করে চলতি বছর এক কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আবারো ৮৫০ মিটার জুড়ে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হলেও তা চলছে খুব ধীর গতিতে। ফলে যে কোনো সময় এই বিশাল এলাকা নদী গর্ভে চলে  যাওয়ার আশাঙ্কা করছে স্থানীয় জনগণ।

সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর খুব কাছেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলকমল এম. জে. এস. মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি কওমী মাদ্রাসা, ঈশানবালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, ঐতিহ্যবাহী ঈশানবালা বাজারসহ বহু বসতঘর। অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ দ্রুত শেষ না করলে এসব স্থাপনা অচিরেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

ব্যবস্থা না নিলে মেঘনায় বিলীন হবে হাইমচরের ঈশানবালা

ঈশানবালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্য মাসুদ বাংলানিউজকে জানান, বিগত পাঁচ বছর ধরে তিনি এই ফাঁড়িতে কাজ করছেন। বর্তমান অবস্থান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণে ছিল ইশানবালা বাজার। দুই বছরেই ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে বহু স্থাপনা। তাদের ফাঁড়িটিও যে কোনো সময় নদী গর্ভে চলে যেতে পারে।

স্থানীয় রহমান প্রধানিয়া বলেন, গেল বছর অস্থায়ী প্রতিরক্ষার জন্য ৬০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে না ফেলায় নদীপাড় রক্ষা হয়নি। এ বছর আবার নতুন করে কাজ শুরু হলেও নদী দিন দিন উত্তাল হওয়ায় ভাঙন ঝুঁকি বাড়ছে। যে পরিমাণ জিও ব্যাগে বালু ভর্তি করা হয়েছে, সেগুলো কাজে লাগালে কিছুটা হলেও শঙ্কামুক্ত হওয়া যাবে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি করছি।

এম. জে. এস. উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মানিক চন্দ্র দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের একাংশ এবং নীলকমল ইউনিয়নের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয় এটি। ১৯৯৪ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে চরাঞ্চলের ৬শ’ শিক্ষার্থী পড়ছে এখানে। মেঘনা নদী থেকে মাত্র ২শ’ গজ দূরে এ বিদ্যালয়ের অবস্থান। নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে কোনো স্থাপনাই থাকবে না এখানে। জেলার মানচিত্র থেকে একটি অংশ বিলুপ্ত হবে।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরদার বাংলানিউজকে বলেন, ঈশানবালার পশ্চিম-উত্তরে রয়েছে বরিশাল জেলার হিজলা থানা এবং উত্তর-পূর্বে রয়েছে শরীয়তপুর। চাঁদপুর জেলার সীমান্ত এলাকা হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় সাত হাজার লোকের বসবাস ঈশানবালায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, বাজার ও কৃষি জমি রয়েছে এলাকায়। নদীতে মাছ আহরণ আর কৃষি কাজ করেই এই এলাকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। আমরা এলাকাটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন এবং স্থায়ী ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।

চাঁদপুর পানি উন্নয়নবোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়।   ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চরাঞ্চলে কাজের জন্য শ্রমিক না পাওয়ায় কাজ শেষ করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এক লাখ ৩৪ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগের মধ্যে এরই মধ্যে ৬০ হাজারেরও বেশি ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আশা করছি, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।