ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রমিক-মালিক অসম সর্ম্পকে রানা প্লাজা ধস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
শ্রমিক-মালিক অসম সর্ম্পকে রানা প্লাজা ধস সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ আয়োজিত আলোচনা সভা

ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেছেন, শ্রমিক-মালিকের অসম সর্ম্পকের কারণেই রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ঘটে। শ্রমিক-মালিকের যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার সক্ষমতা থাকলে সেদিন ওই ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া সম্ভব হতো। 
 
 

রোববার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ক্যাটালাইজিং সোশ্যাল ডায়ালগ ইন দ্য আরএমজি সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
 
তিনি বলেন, আমাদের সমাজে যে ধারাবাহিকভাবে জবাবদিহিতার অভাব।

ওই ঘটনায় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে নজরদারির দরকার ছিলো তাতে বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। আমরা আজকে এখানে যে আলোচনা করছি, কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে মন্ত্রিপরিষদ বা পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে কোনো নজরদারি আমরা এটাতে লক্ষ্য করিনি।
 
সোবহান বলেন, এখন যে বিজনেস মডেল দাঁড়িয়েছে। একটি শার্ট তৈরিতে খরচ হয় ৫ ডলার। বিক্রি করা হয় ২৫ ডলার। বাকি ২০ ডলারের উপর হাত না দিয়ে এ বিজনেস মডেলে শুধু ৫ ডলারের উপর অত্যাচার করে আমরা আসলে কতদূর এগোতে পারবো। শুধু  নীতি কথা বলে গেলে চলবে না।
 
তিনি বলেন, আজকের আলোচনা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আবার আমাদের ওই আগের বাজার ব্যবস্থায় সবাইকে ফিরে যেতে হবে। এরকম ব্যবস্থা আমাদের এড়ানো দরকার।
 
সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য’র সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
 
প্রবন্ধে শিল্প সংঘাতের পরিস্থিতি, গাজীপুর এবং চট্টগ্রাম, আশুলিয়ার সঙ্গে ঢাকার পরিস্থিতি তুলনা, বড়দের সঙ্গে ছোটদের তুলনা, মজুরি, মজুরি বহির্ভূত ক্ষেত্রের পরিস্থিতি, সামাজিক সংঘাত নিরসনের পদক্ষেপ, শ্রমিক, উদ্যোক্তা, সরকারের এবং ক্রেতাদের মনোভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও পারটিসিপেশন কমিটি এবং ট্রেড ইউনিয়নের পরিপূরকতা ও পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের ডেপুটি হেড ইয়োগান হেইম্যান বলেন, শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া, দর-কষাকষির সুযোগ, ইপিজেডের (রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায়) খসড়া আইনসহ কয়েকটি জায়গায় উন্নতির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগামী ১৮ মে সাস্টেনেবিলিটি কমপ্যাক্টের পর্যালোচনা হবে। সেই আলোচনার ফল যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার স্থগিত হতে পারে।
 
বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মাহবুব হাসান খান বলেন, বিজিএমইএ শ্রমিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। শ্রমিকদের দক্ষতা ও জীবনমান উন্নয়নে আইএলও ও সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। সোশ্যাল ডায়ালগ সফল করতে হলে একটি ম্যানুয়াল তৈরি করতে হবে। দেশের তৈরি পোশাকখাতে কতো শ্রমিক কাজ করেন তার কোনো হিসেব আমাদের কাছে নেই। এরইমধ্যে আমরা ১১ লাখ শ্রমিকের তথ্য সংগ্রহ করেছি।
 
তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন আইনগতভাবে শ্রমিকদের করার অধিকার রয়েছে। তবে ইউনিয়নের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে হবে। নির্বাচন করতে বিজিএমইএ, সরকার ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি রাখতে হবে। দেশে ৫৯১টি ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে সচল আছে ২৬০টি। প্রতিবেশী দেশগুলো পোশাকখাতে অনেক সুবিধা দিচ্ছে সরকার। ভারত যেখানে শ্রমিক সস্তা সেখানে কারখানা করছে।
 
শ্রম সচিব মিকাইল শিপার বলেন, শ্রম আইন বিধি সংশোধন করা প্রয়োজন। শ্রম সচিব হিসেবে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারীদের উন্নয়ন করা। দেশে বর্তমানে ৪১টি শ্রম খাত রয়েছে। এসব খাত থেকে শ্রম কল্যাণ তহবিলে ৪০ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।
 
পোশাক কারখানা পরিদর্শক শামসুজ্জামান বলেন, তৈরি পোশাক কারখানার কর্ম পরিবেশ ও মানোন্নয়নে আমাদের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর এ পর্যন্ত ২২৪ জন পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়েছে।
 
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান বলেন, আমরা সাবির্ক অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছি।
 
নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, আমাদের কাছ থেকে ৫ ডলারে কিনে বিদেশিরা ২৫ ডলারে বিক্রি করলেও কেনার দাম তো বিক্রির সময় উল্লেখ করা হয় না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
এসই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।