ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রানা প্লাজা ট্রাজেডি

সেদিন কামে যাইতে চায় নাই স্মৃতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
সেদিন কামে যাইতে চায় নাই স্মৃতি সেদিন কামে যাইতে চায় নাই স্মৃতি

গাইবান্ধা: ঘটনার আগের দিন (২৩ এপ্রিল) বেটি ফোন করে কইলো, মা আমাদের কপাল খারাপ। অফিসে ফাটল দেখা দিয়েছে। কাল (২৪ এপ্রিল) কামে যামু না। বসের কাছে ছুটি চাইছি। কিন্তু বস কইলো, কামে না আইলে বেতন বন্ধ।

এহন কি আর করার মা। অফিসে কামে না গেলে বেতন পামু না।

আর বেতন না পাইলে তোমায় টাকা পাঠামু কীভাবে মা। টাকা না পাঠাইলে তুমি কী খাইবা মা। এভাবেই আগের দিন (২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল) বিধবা মা সন্ধ্যা রানীর (৬৫) সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় ভবনের নিচে চাপা পড়ে নিহত স্মৃতি রানীর (১৯)।

চার বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ধসে যায় সাভারের রানা প্লাজা। দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্প দুর্ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। ওই ঘটনায় ভবনটির বেশ কয়েকটি তলা নিচে দেবে যায়, কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়ে। এতে নিহত হন এক হাজার ১৭৫ জন নারী-পুরুষ। এই দুর্ঘটনায় আহত হন প্রায় দুই হাজারেও বেশি মানুষ।

ভবন ধসের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর (যুগিপাড়া) গ্রামের পঞ্চানন সরকারের মেয়ে স্মৃতি রানী একজন। যার মরদেহ দুর্ঘটনার ১০ দিন পর খুঁজে পায় তার পরিবার।

নিহত স্মৃতির মা সন্ধ্যা রানী বাংলানিউজকে বলেন, বেটি (স্মৃতি) যহন (যখন) এক বছরের বাচ্চা মাইয়া (মেয়ে) তহন (তখন) তার বাপ মরে (১৮ বছর আগে)। হেরপর (এরপর) থ্যাইকে (থেকে) মানষের  বাড়িত কাম (কাজ) করে তিন বেটিকে (মেয়ে) দুঃখ-কষ্টে বড় করছম (করেছি)। স্মৃতি বেটি আছিল সব্বার ছোট। বাকি দুই বেটিকে বিয়ে দিছম (দেয়া)। এহন মুই বাড়িত একা।

বেটির অফিসত ফাটল আছিল, সেটা বেটি আর তার সাথে যারা কাম করতো সব্বাই জানতো। তাই বেটি সেদিন (২৪ এপ্রিল) কামে যাইতে চায় নাই। সেদিন বেটি বসের কাছে ছুটিও চাইছিলো কিন্তু বস টেকা (টাকা) দিবো না বইলা কামে যাইতে বাধ্য করে স্মৃতিকে। পোড়া কপাল মোর, সুখ সহ্য করতে পানু নে (পারিনি)। মুই বাঁচি থাকতেই বুড়া বয়সে বাপ হারা বেটির লাশ দেখনু, বলেন তিনি।

সন্ধ্যা রানী আরো জানান, অভাব দূর করতে এক সময় তিনি নিজেই পোশাক কারখানায় কাজ করতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্মৃতি তাকে ঢাকায় যেতে দেননি। পরে তিনি নিজেই সাভারের রানা প্লাজার সপ্তম তলায় একটি পোশাক কারখানার ওয়াশিং সেকশনে কাজ নেন। এরপর মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন মাকে। সেই টাকায় ভালোই চলছিল তাদের।

তিনি বলেন, সোয়ামি (স্বামী) মরার পর পার্শ্ববর্তী মন্টু বাবুর বাড়ির রান্না ঘরত (ঘর) আশ্রয় নিছুনু (নিয়েছিলাম)। পরে মন্টু বাবু মোক দয়া করে মাথা গুঁজার এক টুকরা জমিন (জমি) দিছে। সে জমিনত (জমি) অনুদানের টেকায় (টাকা) একখ্যান ছাপড়া তুলে কোনোমতে আছম।

কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান সন্ধ্যা রানী।  

সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবীব বাংলানিউজকে জানান, নিহত স্মৃতি রানীর পরিবারকে সরকারিভাবে ছয় লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা থেকে উপজেলায় নিহত ও আহতদের সহায়তা দেয়া হয়েছে।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় গাইবান্ধার সাত উপজেলায় নিহত হন ৪৯ জন। এছাড়া ১১ জন এখনো নিখোঁজসহ শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। যাদের অনেকেই শরীরের কোনো না কোনো অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু জীবনযাপন করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।