ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রানা প্লাজার চার বছরে ওয়েবসাইট প্রকাশ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
রানা প্লাজার চার বছরে ওয়েবসাইট প্রকাশ রানা প্লাজার চার বছরে ওয়েবসাইট প্রকাশ

ঢাকা: ওয়েবসাইট উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রানা প্লাজা ধসের চার বছর পূর্তিতে ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।

শনিবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে Rana Plaza Massacre: An Anthology. www.athousancries.org নামে ওয়েবসাইটটির উদ্বোধন হয়।

দুই বছর আগে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘২৪ এপ্রিল: হাজার প্রাণের চিৎকার’-এর ইংরেজি অনুবাদ নিয়ে ওয়েবসাইটটির উদ্বোধন করেন রানা প্লাজার নিহত শ্রমিক সাগরিকার বোন বকুল খাতুন।

সাগরিকা ইথারটেক্স গার্মেন্টের সুইং অপারেটর ছিলেন। এসএসসি পরীক্ষা শেষে নাটোর থেকে পরিবারের সাথে ঢাকায় এসে রানা প্লাজায় কাজ নেয় সাগরিকা। মৃত্যুর পর তার পরীক্ষার ফলাফল বের হয়, জিপিএ ৫ পেলেও সাগরিকার জানা হয়নি নিজের সাফল্যের গল্প। সাগরিকার এসব কথা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তার ছোট বোন বকুল খাতুন।

রানা প্লাজা এবং বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবন ও ইতিহাস দুনিয়ার পাঠকদের কাছে তুলে ধরাই ওয়েবসাইটটির লক্ষ্য। ২০১৫ সালে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে প্রকাশিত গ্রন্থ ২৪ এপ্রিল : হাজার প্রাণের চিৎকার গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ নিয়েই ওয়েবসাইটি করা হয়েছে।

ওয়েবসাইটে নিহত, নিখোঁজ ও আহত শ্রমিকদের জীবনের গল্প, নিহত তালিকা, অ্যাক্টিভিস্ট লেখক অর্থনীতিবিদদের লেখা, ছবি, গান , নাটক ও কার্টুন রয়েছে। গার্মেণ্ট শ্রমিক সংহতি দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে শ্রমিকদের জীবনের গল্প সংগ্রহ করে এবং নিরলস পরিশ্রম করে একটি বিভাগ ও জেলা অনুযায়ী নিহত নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করে। এসব লেখা তথ্য উপাত্ত এবং ছবি নিয়েই এই ওয়েবসাইট www.athousancries.org.

ওয়েবসাইট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, রানা প্লাজায় নিহত রিয়াজুল খোকনের মা রাবেয়া খাতুন,  নিহত শান্তার বোন সেলিনা, পঙ্গু রোজিনা আক্তার, সাদ্দাম হোসেন, ইয়ানুর, আসমা আক্তার, নিহত ফজলে রাব্বীর মা রাহেলা বেগম, নিহত বিউটি বেগমের স্বামী আলম মাতব্বর ও রানা প্লাজার আরো অনেকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্ত্য রাখেন, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, হামিদা হোসেন, আনু মুহাম্মদ, সারা হোসেন, সিউতি সাবুর, সামিনা লুৎফা, সুস্মিতা পৃথা, শেহজাদ আরেফীনসহ আরো অনেকে। এছাড়া লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, অনুবাদক, আলোকচিত্রীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, চার বছর পার হয়ে গেছে রানা প্লাজার ঘটনার। যেখানে ১১০০ এরও বেশি শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে। আজও শাস্তি হয়নি দোষীদের, বদল হয়নি ক্ষতিপূরণ আইন। আমরা সবাই যেন ভুলতে বসেছি রানা প্লাজার কথা। এই অবস্থায় ওয়েবসাইটটির গুরুত্ব অপরসীম। এই ওয়েবসাইটটি আমাদের রানা প্লাজার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে যেমন সাহায্য করবে তেমনি এই ধরনের ঘটনার বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রতিবাদী করে তুলবে।

বক্তারা আরও বলেন, রানা প্লাজায় হাজারো শ্রমিকের প্রাণ হারানো ঘটনা সারা দুনিয়াকে উদ্বিগ্ন করেছে। সারা দুনিয়ার কারখানার ইতিহাসে এরকম ঘটনা বিরল। বাংলাদেশের শ্রমিকরা শুধু এই দেশের জাতীয় শিল্পের শ্রমিক নন, কাপড়ে মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাগ লাগিয়ে ইউরোপ আমেরিকার বাজারে পণ্য বিক্রি করে এই শ্রমিকরা গ্লোবালাইজেশনের অংশে পরিণত হয়েংছে। ফলে এই কারণেও ওয়েবসাইটটির গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে সারা দুনিয়ার পাঠকের কাছে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরতেও এই ইংরেজি ওয়েব সাইটটি ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশা ব্যক্ত করেন।

সবশেষে সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্‌তার বলেন, রানা প্লাজার নিহত নিখোঁজ শ্রমিকরা কেবল সংখ্যা নয়। তাদেরও আর সব মানুষের মতো স্বপ্ন ও জীবন আছে। অথচ এতো বড় ঘটনার পর সরকার এবং মালিকের ভূমিকাতে মনে হয় শ্রমিকরা কেবল মুনাফা তৈরির নাটবল্টু।

অবিলম্বে দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের আইন বদলের দাবি জানান তাসলিমা আখ্‌তার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
পিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ