ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমি কেমনে ক্লাস করবো’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
‘আমি কেমনে ক্লাস করবো’ এভাবে কাঁদাপানি মারিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: শাকিল

ঢাকা: শাহিদুর রহমানের গন্তব্য নয়াপল্টন। কাঁদাপানি এড়াতে বেশ কসরত করে এসেছেন শান্তিনগর ডাকঘর পর্যন্ত।  

কিন্তু এখানে রাস্তায় কোমরপানি, ফুটপাত দিয়ে যাবেন তারও কোনো উপায় নেই। সংস্কার কাজের জন্য কেটে রাখা হয়েছে ফুটপাত।

কোনভাবেই আর যাওয়ার উপায় নেই। কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজলেন। কয়েকটি রিকশার সঙ্গে দরদামও করলেন। রিকশা চালকরা ওদিকে যেতে সম্মত হলেন না।
 
একজন রিকশা চালক যেতে চাইলেন। তবে বিশ টাকার ভাড়া হাকলেন ষাট টাকা। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর পঞ্চাশ টাকায় রিকশা ভাড়া করে গন্তব্যে রওয়ানা দিলেন। শাহিদুর রহমান তিনগুণ ভাড়া দিয়ে কাঁদাপানি থেকে রক্ষা পেলেন।

কিন্তু ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী গালস কলেজ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কিন্তু শেষ রক্ষা হলো। কারণ তাদের কাছে বাড়তি ভাড়া নেই। সে কারণে জুতা-মোজা চুবিয়ে স্কুলের পথে যেতে দেখা গেলো তাদের।
 এভাবে কাঁদাপানি মারিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।  ছবি: শাকিল
সিদ্ধেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের সুমাইয়া ইসলামের সাদা পাজামা কাঁদাপানিতে তামাটে হয়ে গেলো। কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন এই নিয়ে আমি কেমনে ক্লাস করবো। কতোদিন ধরে ফুটপাত ভেঙে রেখেছে, ঠিক করার কোনো নাম নেই। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। জ্যামের কারণে রিকশাও যেতে চায় না। কি করবো আমরা।
 
স্থানীয় দোকানি সবুজ মিয়া জানালেন, ফুটপাতের কাজ শুরু হয়েছে বছর খানেক আগে। পনেরদিন আগে থেকে কাজ বন্ধ। ফুটপাত ভেঙে মাটি তুলে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ফ্লাইওভারের পাইলিংয়ের মাটি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
এভাবে কাঁদাপানি মারিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষজন- ছবি: শাকিল  
ধান রোপনের জন্য যেমন জমি প্রস্তুত করা হয়। ঠিক তেমন অবস্থা মালিবাগ রেলগেট থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত। পাইলিংয়ের জন্য তোলা মাটিগুলো রাস্তার উপর স্তুপ করে রাখা হয়েছে। সেগুলো বৃষ্টি হলে কাদা, আর রোদ-বাতাসে ধুলিঝড় হয়ে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে।
 
মৌচাক থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থা অবর্ণনীয়। এখানে রামপুরাগামী লেনটি কয়েক মাস ধরে বন্ধ। ড্রেন নির্মাণের জন্য বিশাল গর্ত করে রাখা হয়েছে। ফরচুন শপিংমলের দোকানি কাওছার মিয়া জানান, একদিন কাজ চলেতো পাঁচদিন বন্ধ থাকে। প্রায় কয়েক মাস হয়ে গেলো এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। লোকজন যাতায়াত করতে পারে না।
 
ব্যবসায়ীরা অনেকেই লোকসান দিতে দিতে দোকান বন্ধ করে দিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বলে জানান কাওছার মিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এসআই/বিএস
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।