ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমার জীবনে আর ২৫ এপ্রিল আসে না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
‘আমার জীবনে আর ২৫ এপ্রিল আসে না’ ‘আমার জীবনে আর ২৫ এপ্রিল আসে না’

সাভার থেকে ফিরে: সাভারের রাজাশন এলাকার একটি মেসে অনেক‍গুলো ছোট ছোট ঘর। প্রতিটি ঘরে একজনের জায়গায় থাকছেন তিনজন। এ বাড়িতেই একরুম নিয়ে ছেলে রাজু আর ভাইকে (রাজুর) নিয়ে থাকতেন আবু সাইদ।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত রানা প্লাজা ধসে নিহত হন আবু সাইদের ছেলে রাজু। আজও কাজ শেষে ঘরে ফিরে মাটিতে পাতা বিছানায় বসে ছেলের কথা স্মরণ করে চোখটা ভিজে যায় আবু সাইদের।

এ বিছানায়ই ছেলেকে নিয়ে ঘুমাতেন অসহায় বাবা।

ছেলে রাজু ২০১৩ সালের দিকে কক্সবাজারে একটি কারখানায় কাজে যোগ দেন। অন্যদিকে সাভারের শতরূপা টেক্সটাইলের নাইট গার্ড হিসেবে কাজ করতেন আবু সাইদ। রাজুর মা আর ছোট ভাই থাকতেন রাজবাড়ির হাভাসপুর গ্রামের বাড়িতে। বেশ গোছালো কাটছিলো আবু সাইদের সংসার। কিন্তু, সুখের সংসারে যেনো নজর লাগলো।

একটু ভালো থাকার আশায় ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার একটি কারখানায় কিউসি (কোয়ালিটি কন্ট্রোলার) হিসেবে যোগদেন রাজু। বেতন প্রায় ১০ হাজার টাকা। রাজাশনের মেস বাড়িতে দিন শেষে ভবিষ্যত নিয়ে কতোই না স্বপ্ন দেখতেন বাবা-ছেলে।
‘আমার জীবনে আর ২৫ এপ্রিল আসে না’
ওই বছরের ২৩ এপ্রিল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ‘তোমার কি মন খারাপ’? এমন প্রশ্নে বাবা আবু সাইদের কাছে একজোড়া চামড়ার জুতার আবদার করে রাজু। ২৫ এপ্রিল বেতন হলে ছেলেকে জুতা কিনে দেবেন বলেছিলেন আবু সাইদ। কিন্তু, তা আর হয়ে ওঠেনি।

২৪ এপ্রিল সকালে রানা প্লাজায় কাজে যেতে চায়নি রাজু। বারবার বাবা আবু সাইদকে বলেছিলেন, ‘বাবা বিল্ডিং এ ফাটল ধরছে। আমার ভয় লাগে। কাজে যামু না। ’ বাবাও সায় দেন। কিছুক্ষণ পরই কারখানার সুপারভাইজারের কল আসে রাজুর ফোনে। আইজকে কাজে না গেলে পুরো মাসের বেতন দিবে না। আইজ গিয়ে আর কোনো দিন যামু না, এ কথা বলে কারখানায় যায় রাজু।

পরক্ষণেই রাজা প্লাজা ধসের খবরে ছুটে যান আবু সাইদ। ছেলে হারানোর শোকে বিহ্বল বাবা ধসের ১৪ দিনেও রাজুর মরদেহ পাননি। ১৫তম দিনে ফোন আসে আবু সাইদের কাছে, ‘রাজুর মরদেহ পাওয়া গেছে। নিয়ে যান। ‍’

পাশেই অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে ছুটে যান আবু সাইদ। ধসের ঘটনায় নিহতদের মরদেহ রাখা হয় ওই স্কুল মাঠে। মরদেহগুলোর একটির বুকে চকলেট দেখেই তা রাজুর বলে নিশ্চিত হন আবু সাইদ। কারণ রাজুর পকেটে সবসময় চকলেট থাকতো। সেই চকলেটই ছিলো রাজুর বুকে।

এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবরে হার্ট অ্যাটাক করেন মা। চার বছর কেটে গেলেও বুকের মাঝে ভর করা সে পাথর এখনও লাঘব হয়নি। আজও রাজুর কথা মনে করে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন।

অন্যদিকে কাজ শেষে ঘরে ফিরলে বুকটা হুঁ হুঁ করে কেঁদে ওঠে বাবা আবু সাইদের। সামনে কেবলই অনিশ্চিত অন্ধকার। আবু সাঈদ বলেন, আমার জীবনে আর ২৫ তারিখ আসে না। আমার রাজুটা এক জোড়া জুতা চাইছিলো। আমিতো ২৫ তারিখ দিতে চাইছিলাম। কিন্তু তা হইলো না। চামড়ার জুতা দেখলেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। আমার ছেলেটা শেষ একটা জিনিসই চেয়েছিলো, আমি দিতে পারিনি।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন ১ হাজার ১৭৫ জন। আহত হন প্রায় ২ হাজার শ্রমিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
ইউএম/ওএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।