ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাতবেকির ঘাটের গাঙশালিকেরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
সাতবেকির ঘাটের গাঙশালিকেরা গাঙশালিক-ছবি-আরিফ জাহান

বগুড়া: জনবসতির আশেপাশে থাকতেই বেশি ভালবাসে নানা প্রজাতির শালিক। গ্রাম ‍বাঙলার চিরচেনা এই শালিক হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতায়। গ্রামেগঞ্জেও এখন আর সহজে নজরে আসে না অনেক প্রজাতির শালিক পাখি। শহর এলাকার কথা বাদই দিলাম।

গাঙশালিক, বামন শালিক, ময়না শালিক, চিতা শালিক, ভাতশালিক, ঝুঁটি শালিক, গোবরে শালিক বিরল প্রজাতির শালিক পাখির অন্যতম। এসব শালিকের এসব প্রজাতি আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না।

পড়লেও খুব কম। অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টি‍সীমার মধ্যে আসার আগেই হারিয়ে যায়।

তবে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বাঙালি নদীর সাতবেকির খেয়াঘাটে দেখা মেলে হারিয়ে যাওয়া বিরল প্রজাতির সেই গাঙশালিকের ঝাঁকের।  নদীপাড়ের মাটি ভেদে করে বেরিয়েছে বাঁশের শেকড়। মাটি হেলে ঝুলে আছে শেকড়গুলো। এর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে অসংখ্য গর্ত। গর্তগুলোর প্রবেশপথের মুখ আকারে ছোট হলেও বেশ গভীর। সারি সারি গর্তগুলো মানুষকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে।  

নদীর পাড়ে গর্ত করে এভাবে বাসা বানায় গাঙশালিক। সেই বাসায় বসবাস করে ওরা। প্রত্যহ ভোরে আহারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। আহার খুঁজে বেড়ায় নদীর কোল ঘেঁষে। আবার মুহূর্তে ফিরে আসে নিজের তৈরি সেই বাসায়। ইচ্ছে হলে ফুড়ুত করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে গাঙশালিক। একা ও দল বেঁধে। সারাবেলা চলে ওদের আসা যাওয়া।  

অনেক সময় গর্তের মুখে বসে উঁকি ঝুঁকি মারতে থাকে ওরা। মানুষ দেখলে ভয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেয় ওরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে পাশের বাঁশঝাড়ের মাথায় বা ডালপালায় বসে মনের আনন্দে কল-কোলাহলে মেতে ওঠে গাঙশালিকের দল।  

সাতবেকির ঘাটের গাঙশালিকেরাকারো ক্ষতি করে না ওরা। বরং নানাভাবে উপকারে করে। ধান, মরিচ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের মাথায় বা ডালপালায় বসে পোকামাকড় খায়। অনেক খেতে মাটিতে বসে খুঁটে খুঁটে ফসলের ক্ষতিকারক নানা ধরনের কীটপতঙ্গ ধরে খায় এরা।

মোশারফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, শামীম হোসেনসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, সাতবেকির খেয়াঘাটে নদীপাড়ের মাটিতে গর্তের বাসায় দীর্ঘদিন ধরে গাঙশালিকের দল বসবাস করছে।  

সাধারণত এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না অন্য কোথাও। যা স্থানীয়দের ভীষণভাবে আনন্দ দেয়। স্থানীয়রা কেউ পাখিগুলোর ক্ষতি করে না বলে জানালেন এরা।  
নদী বা জলাশয়ের কিনারেই বেশি থাকে, দেখা যায় বলে গাঙ শালিকের ইংরেজি নাম Bank Myna। বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে আক্রিদোথিরেস গিংগিনিয়ানুস (Acridotheres Ginginianus)। এরা সর্বভূক। দেখতে ভাতশালিক আর ঝুঁটি শালিকের মত হলেও ঠোঁট কিছুটা পুরু আর উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের। ঠোঁটের ওপর উঁচু পালকের ঝুঁটি ও দু’চোখের পাশে লম্বা লাল আভা। বুকের পালক ধূসর। পিঠ ও মাথার পালক পাটকিলে রংয়ের। লম্বায় সর্বোচ্চ ২৩ সেন্টিমিটার।

বগুড়া সরকারী শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এসএম ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, ছিপছিপে আকৃতির পাখি গাঙশালিক। ময়নার চেয়ে আকারে সামান্য ছোট ওরা। নদী বা বিলের ছোট মাছ গাঙশালিকের খুব প্রিয়। নরম মাটি থেকে কেঁচো ও পোকামাকড় খায় ওরা।  
তিনি আরো জানান, সাধারণত নদীতীরবর্তী বিল-ঝিল এলাকায় এদের দেখা পাওয়া যায়। খড়কুটো, ঘাস-পাতাসহ আনুষঙ্গিক জিনিস দিয়ে নদীর তীর বা বিলের উঁচু স্থানে গর্ত করে বাসা বানায় ওরা। স্ত্রী গাঙশালিক ৪-৫টি উজ্জ্বল নীল রঙের ডিম পাড়ে। সচরাচর দু থেকে তিন জোড়া গাঙ‍শালিক একসঙ্গে বাসা বাঁধে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।