ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্নীতির উৎস বের করতে কাজ করছে দুদক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
দুর্নীতির উৎস বের করতে কাজ করছে দুদক

ঢাকা: জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি গ্রাস করেছে। দুর্নীতি রোধ করা গেলে প্রতিবছর দেশের জিডিপি ২ শতাংশ বাড়বে। দেশের উন্নয়নে দুর্নীতির উৎস খুঁজে বের করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

সম্প্রতি দুর্নীতি প্রতিরোধে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দেয় দুদক চেয়ারম্যান। চিঠিতে দুদক চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি ছিল চলতি মূল্যে ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা এবং স্থিরমূল্যে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ৬১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। চলতি মূল্যে ২ শতাংশ হিসাবে দাঁড়াবে ৩৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা। আর পাঁচ বছরের জন্য রক্ষণশীল হিসাব করলে দুর্নীতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৮০ হাজার কোটি টাকা। চিঠিতে আরও বলা হয়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান গতিশীল হবে এবং দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমবে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে সবচেয়ে বেশি সেবাগ্রহীতাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও কম নয়। সবমিলিয়ে সরকারি ২৩টি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি বন্ধে ৩০ জানুয়ারি থেকে মাঠে নেমেছে দুদক। দুদকের ৯ জন পরিচালক সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির উৎস খুঁজতে কাজ করছেন।  

এই সরকারি ২৩টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, তিতাস, বিমান, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস,বিএসটিআই, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ওয়াসা, বিআরটিএ,  বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, গণপূর্ত অধিদফতর, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, রাজউক, শিক্ষা অধিদফতর, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে, তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স,হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ), কাস্টমস, ভ্যাট, আয়কর বিভাগ, সওজ ও পরিবেশ অধিদফতর।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, ওয়াসা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দুর্নীতির খোঁজে গঠিত টিমের প্রধান দুদক পরিচালক বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দুর্নীতি’র উৎস খুঁজতে তিনি যে প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বে আছেন সেগুলোতে দুর্নীতি অনেকটা কমে গেছে। মানুষ এখন সেবা পাচ্ছে। আগে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা পাওয়া দুষ্কর হলেও বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কাউকে হয়রানির শিকার হতে হয় না।  

তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন অফিসে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমবার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে যে পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিলো দ্বিতীয়বার পরিদর্শনে গিয়ে তার অনেকটা উন্নতি দেখা গিয়েছে। এখন তথ্য প্রদানের জন্য রিসিপশন করা হয়েছে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা ‍অনায়াসে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারছে। এছাড়া জমি রেজিস্ট্রেশন করার সময় যে পে-অর্ডার করা হতো সেটা ধানমন্ডি অফিস ২ মাসের প্রায় ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেয়নি। সুতরাং তাদের কাছে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার কোনো ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট ছিলো না। এতে বোঝা যায় সেখানে দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু দুদক পরিদর্শনে যাওয়ার পর এখন সব রিপোর্ট ঠিক আছে। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি রোধে দুদক যে টিম গঠন করেছে সেটা ফলপ্রসূ হয়েছে।  

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের কার্যক্রম কিছুটা আশার সঞ্চার করে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে। তবে যারা দুর্নীতিবাজ তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের একটা বার্তা দিতে হবে দুর্নীতি করলে কোনো ছাড় নেই। সবশেষে সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে। তাহলেই দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।  

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, দুদক দুর্নীতি হওয়ার আগেই সেটা দমন করতে চায়। এক্ষেত্রে দুদক শুধু একা কাজ করবে সেটা নয়। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেসব দুর্নীতিবাজ আছে তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। কেন না সেবাগ্রহীতারা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
এসজে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।