ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাওরে কৃষকদের দুর্দিনে মাথায় হাত চাটাই ব্যবসায়ীদের 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
হাওরে কৃষকদের দুর্দিনে মাথায় হাত চাটাই ব্যবসায়ীদের  হাওরে কৃষকদের দুর্দিনে মাথায় হাত চাটাই ব্যবসায়ীদের-ছবি-অনিক খান

ইটনা হাওর (কিশোরগঞ্জ) থেকে: আষাঢ় শুরুর আগেই বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলে এখন ভরা বর্ষা। দিন-রাত অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে। চৈত্র মাসেই ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। স্বপ্নের বোরো ফসলের এমন সর্বনাশে হাওর জুড়ে কৃষকের মাঝে চলছে হাহাকার। 

বোরো ধানের গন্ধ নেই হাওরবেষ্টিত গ্রামগুলোতে। নতুন ধান গোলায় তোলার স্বপ্নও অনেক আগেই মাঠে মরে গেছে।

কৃষকদের এমন দুর্দিনে মাথায় হাত পড়েছে চাটাই ব্যবসায়ীদেরও।  

কষ্টের ফসল পানি কেড়ে নেওয়ায় কৃষকদের ধান শুকাতে বা গোলা তৈরি করতে আর চাটাইয়ের প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে দিনে একটি-দুটো চাটাইও বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।  

বিক্রি না হওয়ায় অনেক চাটাইয়ে আবার জেঁকে বসেছে পোকা। টাকা খাটিয়ে এ ব্যবসায় নেমে উল্টো তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা সদরের পুরাতন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।  

হাওরে কৃষকদের দুর্দিনে মাথায় হাত চাটাই ব্যবসায়ীদের-ছবি-বাংলানিউজস্থানীয়রা জানান, সাধারণত ধান শুকাতে চাটাইয়ের দরকার হয়। এছাড়া ফসল সংরক্ষণের জন্যও চাটাই দিয়ে তৈরি করা হয় গোলা। সাধারণত এক থেকে দেড়শ’চাটাই দিয়ে বানানো হয় একেকটি গোলা।  

কিন্তু হাওরে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মতো চাটাই ব্যবসায়ীদের জীবনেও ছন্দপতন ঘটেছে।  

উপজেলার নগরহাটি এলাকায় থাকেন চাটাই ব্যবসায়ী আলী রহমান (৫২)। বছর দশেক যাবৎ নিজেকে জড়িয়েছেন এ ব্যবসায়। অলস দুপুরে মুখভার করে পুরাতন বাজারে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গদিতে বসে আছেন।  

ব্যবসার হালহকিকত তুলে ধরে বলছিলেন, হাওরের কৃষকের গোলায় খোরাকির ধান পর্যন্ত নেই। গোলায় আর নতুন ধান তোলার স্বপ্নও নেই তাদের।  

তার দোকানে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার চাটাই পড়ে রয়েছে। এতে  প্রায় কয়েক লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।

তিনি জানান, প্রতিটি চাটাইয়ের দাম এক থেকে দেড়শ’ টাকা। ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও শ্যামগঞ্জ থেকে বিক্রির জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার চাটাই কিনেছিলেন।  

হাওরে কৃষকদের দুর্দিনে মাথায় হাত চাটাই ব্যবসায়ীদের-ছবি-বাংলানিউজফাল্গুনের শেষ নাগাদ তিন থেকে চারশ’ বিক্রি করেছেন। এরপরই তলিয়ে গিয়েছে আধা-পাকা ধান। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি।

ব্যবসায়ী আলী রহমানের মতোই ব্যবসার দুর্দশার কথা জানালেন কয়েক হাত দূরে থাকা আরেক ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ। নিজের দোকানঘরে মজুদ করা চাটাই দেখিয়ে বললেন, কৃষকও মরেছে, আমাদের ব্যবসায়ও ডুবেছে। চৈত্র মাসে অকাল বন্যায় পানি বেড়ে যাওয়ার পর চাটাই বিক্রিও বন্ধ হয়ে গেছে।  

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব কৃষক জিলু খাঁ’র সঙ্গে আলাপকালে চাটাই ব্যবসায়ীদের কথার যথার্থতা বোঝা গেল। এ কৃষক যখন সব হারানোর কথা বলছিলেন তখন তার চোখের কোণে চিকচিক করছিল জল।

ধরে আসা গলায় বললেন, প্রতি মৌসুমে আমার চাষ করা জমির ফসল শুকানো ও ঘরে সংরক্ষণের জন্য প্রায় শতাধিক চাটাইয়ের প্রয়োজন হয়। এখন ফসল নেই। তাই চাটাইয়েরও দরকার নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭ 
এমএএএম/আরআর


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।