ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পরীক্ষার জন্য রাওদার কক্ষের ফ্যান, ফুটেজ জব্দ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
পরীক্ষার জন্য রাওদার কক্ষের ফ্যান, ফুটেজ জব্দ রাওদার কক্ষ থেকে জব্দকৃত ফ্যান/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ কন্যা রাওদা আতিফের কক্ষ পরিদর্শন করলো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন।

উচ্চ পর্যায়ের ওই টিমে ছিলেন- সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফি ইকবাল, সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা আসমাউল হক এবং মডেল রাওদা আতিফের বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ।

এর আগে গত ০৪ এপ্রিল দুপুরে মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নওদাপাড়ায় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে গিয়ে রাওদার কক্ষ পরিদর্শন করেন।

বৃহস্পতিবার কক্ষ পরিদর্শনের সময় তারা ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামতের ছবি তোলেন। এমনকি দরজা কিভাবে ভাঙা হয়েছিলো তাও ভালো করে আবার যাচাই করে দেখেন।

এ সময় রাওদার বাবা সিআইডি’র টিমকে দেখান, ভেতর থেকে ছিটকানি লাগিয়ে বাইরে থেকে দরজা খোলা যায় না। পরে পুলিশও বিষয়টি আবার পরীক্ষা করে দেখেন।

যদিও এর আগে বলা হয়েছিলো ভেতর থেকে লাগানো থাকলেও বাইরে থেকে ঝাকুনি দিলে ভেতর থেকে দরজা খুলে যায়। এজন্য দরজা ভাঙার প্রয়োজন পড়েনি। এর পরই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে থাকা রাওদার মরদেহ নিচে নামানো হয়।

তাই, কক্ষ পরিদর্শন শেষে বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে সেই সিলিং ফ্যান খুলে নিয়ে যায় সিআইডি পুলিশ। পরিদর্শনকালে তারা সিসি টিভি ক্যামেরা ও তার ফুটেজ জব্দ করেন।

এছাড়া এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নজরুল ইসলাম, হোস্টেল সুপার মাহমুদা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল আজিজ রিয়াজসহ সংশ্লিদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।

পরিদর্শন শেষে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের বলেন, মডেল রাওদা মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তারা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মহিলা হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ পরিদর্শন করলেন।

তারা তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ওই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রাওদা গলায় ফাঁস দিয়েছিলেন কী না, তা পরীক্ষা করতে খুলে নেওয়া হয়েছে ফ্যানটি। তারা যাচাই করে দেখবেন ফ্যানটিতে ৫০/৫৫ কেজি ওজনের কোনো দেহ ঝুলেছিলো কী না। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আপাতত এর চেয়ে বেশিকিছু বলবেন না বলেও জানান তারা।

এর আগে গত ২৯ মার্চ রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের মহিলা হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাওদা আতিফের (২০) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩১ মার্চ দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। গলায় ফাঁস দেওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কোনো আলামত মেলেনি।

পরে ১ এপ্রিল দুপুর সোয়া ২টার দিকে মহানগরীর হেতমখাঁ গোরস্থানে তার দাফন কাজ শেষ করা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১৩তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রাওদা। বিদেশি কোটায় ভর্তির পর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মহিলা হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষে ওঠেছিলেন রাওদা। ওই ব্লকে তার বান্ধবী সিরাত পারভিনসহ আরও ১৪ জন বিদেশি ছাত্রী থাকেন। এর মধ্যে মালদ্বীপের আরও ছাত্রী রয়েছেন।

এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে বোর্ড গঠন করা যায়নি। তাই পুনঃময়নাতদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার রাওদার মরদেহ উত্তোলন করা হচ্ছে না। সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আসমাউল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ফরেনসিক চিকিৎসকদের বোর্ড গঠনের পরেই, আবার দিন-ক্ষণ ঠিক করা হবে বলেও জানান এ তদন্ত কর্মকর্তা।

হত্যা মামলা দায়ের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) মালদ্বীপের মডেল রাওদা অাতিফের মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেন আদালত। মরদেহ তোলার সময় জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ড. রক্তিম চৌধুরীকে উপস্থিত থাকার জন্য বুধবার (১৯ এপ্রিল) নির্দেশ দেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সুব্রত পাল।

এরপর ড. রক্তিম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মরদেহ তুলতে চান। এর জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সব আয়োজন করেন। তবে চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে শেষ পর্যন্ত পেছাল কবর থেকে রাওদার মরদেহ তোলার দিন-ক্ষণ।

সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আসমাউল হক বলেন, বুধবার তিনি রাওদার বাবার বক্তব্য নিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, এর আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের মর্গে রাওদার মরদেহ ময়নাতদন্তকারী বোর্ডের ব্যাপারেই তার আপত্তি রয়েছে। কারণ বোর্ডের প্রধান ও রামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. মনসুর রহমান বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাপাতালের খণ্ডকালীন চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেন। আর রামেকের অবসরপ্রাপ্ত আরেক বিভাগীয় প্রধান ডা. এমদাদুর রহমান বর্তমানে ওই কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।

এ জন্য তাদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আস্থা নেই রাওদার বাবার। মূলত এজন্যই নতুন করে ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগেই রাওদার মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হবে বলেও জানান আসমাউল হক।

এজন্য রামেকের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠন করা হবে মেডিকেল বোর্ড। কিন্তু বোর্ড গঠন করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না বলেই মরদেহ উত্তোলনে সময় লাগবে বলে জানান সিআইডির এ তদন্তকারী কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
এসএস/ওএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।