ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সবার জন্য উন্মুক্ত হলো সুচিত্রা সেনের বাড়ি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
সবার জন্য উন্মুক্ত হলো সুচিত্রা সেনের বাড়ি পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি

পাবনা: অবশেষে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের তথা উপমহাদেশের কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়ি। পাবনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বড়িটি খুলে দেয়া হয়েছে। 

তবে এ বাড়ি নিয়ে জেলাবাসীর প্রত্যাশা একটু বেশি। বাড়িটিতে সম্মৃদ্ধ সংগ্রহশালা ও একটি ফিল্ম ইনস্টিটিউট করার দাবি তাদের।

 

পাবনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতা বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কবলে ছিল। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই বাড়িটি দখলমুক্ত করা হয়। উচ্চ আদালত বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশনার পাশাপাশি সেখানে সুচিত্রা সেনের নামে একটি সংগ্রহশালা করতে বলেছেন। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় সংগ্রহশালার কাজ থেমে থাকায় অরক্ষিত বাড়িটি পরিণত হয়েছিল মাদকসেবীদের আখড়ায়। ফলে জেলা প্রশ্সান বাড়িটি রক্ষার জন্য স্বল্প পরিসরে সংগ্রহশালা করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংগ্রহশালায় সুচিত্রার নানা সময়ের তোলা ৪৬টি ছবি স্থান পেয়েছে। বাড়িটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এ বাড়ির প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। পাবনায় সুচিত্রার বাড়ি

পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বাংলানিউজকে বলেন, বাড়িটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় এর সৌন্দর্য হারাচ্ছিল। মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল বাড়িটি। চুরি হচ্ছিল বিভিন্ন মালপত্র। তাই আমরা বাড়িটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য একজন লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
 
রেখা রানী বালো আরো বলেন, আমরা একই সঙ্গে সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আশা করছি, এ যাত্রা থেমে থাকবে না, একদিন আধুনিকতার ছোঁয়া পাবে সুচিত্রা সেনের বাড়ি।
  
এদিকে, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও সীমিত পরিসরের সংগ্রহশালা দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা। মহানায়িকার শৈশব-কৈশরের স্মৃতিধন্য এ বাড়ি দেখার সুযোগ পেয়ে দারুন খুশি তার ভক্তরা।  পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ির অন্দর মহল

জয়পুরহাট থেকে ঘুরতে আসা মুন্নুজান বাংলানিউজকে বলেন, আমার নিকটাত্মীয়ের বাড়ি পাবনায় হওয়ায় বহুবার সুচিত্রার বাড়ির সামনে এসে বাইরে থেকেই ফিরে গেছি। এখন ভেতরে ঢোকার পর সত্যিই ভালো লাগছে।

সম্প্রতি ঘুরতে আসা ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না তাসনিম বলেন, আমি এ যুগের মেয়ে হলেও সুচিত্রা সেন আমার আইডল, তাকে আমার খুব ভালো লাগে। তার অধিকাংশ সিনেমাই দেখেছি আমি।  
তার বাড়িতে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে।  সুচিত্রা সেনের বাড়ি

পাবনা ড্রামা সার্কেলের সভাপতি ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, সুচিত্রা সেনের বাড়িটি জামায়াতের দখলে ছিল। আমাদের আন্দোলনের ফলে তা দখলমুক্ত হয়েছে। সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, সেখানে একটি চলচ্চিত্র কেন্দ্রিক সংস্কৃতি কেন্দ্র বা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হোক। যাতে আগ্রহীরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অবদান রাখতে পারে।

পাবনা সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি কমরেড জাকির হোসেন বলেন,  সুচিত্রা সেন চলচিত্র জগতের বিস্ময়, কালজয়ী এই মহানায়িকাকে নিয়ে আমরা পাবনায় তিনবার সপ্তাহব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব করেছি। তার অভিনয় নিয়ে গবেষণা, আলোচনা ও শেখার অনেক কিছু রয়েছে। এজন্য এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইনস্টিটিউট করতে হবে।
 
প্রসঙ্গত, ১৯৩১ সালে ৬ এপ্রিল জন্ম নেন সুচিত্রা সেন। তার শৈশব ও কৈশর কেটেছে পাবনা পৌর এলাকার হেমসাগর লেনের এই বাড়িতে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর সপরিবারে কলকাতা চলে যান তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।