ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুই সন্তানের সামনে মামীকে খুন করে ভাগনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
দুই সন্তানের সামনে মামীকে খুন করে ভাগনে রোজিনা (ফাইল ফটো)

ঢাকা: সৌদি প্রবাসী মামার স্ত্রী রোজিনা আক্তার মিতু (২৭) দুই শিশু সন্তানসহ রাজধানীর কাফরুলের ভাড়া বাসায় থাকতেন। মামীর বাসায় প্রায়ই যাতায়াত ছিলো ভাগনে আহমেদ শরীফ শাকিলের (৩০)। বিদেশ থেকে মামা রফিকুল আলম চৌধুরী মাঝে মধ্যে টাকা পাঠাতেন ভাগনের অ্যাকাউন্টে। সেই পাঠানো টাকার দ্বন্দ্বের জেরে দুই শিশু সন্তানের সামনেই মামীকে গলাকেটে হত্যা করেন ভাগনে শাকিল।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) কাফরুল থানার ইব্রাহীমপুর এলাকার ৮৩৯ নম্বর বাড়ির নিচতলার বাসায় খুন হন রোজিনা। এ বিষয়ে রোজিনার বড় ভাই ফিরোজ আলম ভূঁইয়া বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

খুনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত রোজিনার বড় মেয়ে মিনহা আলম পহেলার (৭) ভাষ্য অনুযায়ী শাকিল খুন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার পর থেকে শাকিল পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রোজিনার বাবার বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট থানার ইন্দ্রপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মোরশেদ আলম। চার বোন আর পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে রোজিনা অষ্টম।

২০০৯ সালের ১২ জুন পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রোজিনার। বিয়ের পর থেকে স্বামীর বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার চরফকিরা গ্রামেই থাকতেন। সন্তানদের লেখাপড়ার কথা বিবেচনা করে প্রায় দুই বছর ধরে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন রোজিনা। দুই রুমের বাসায় দুই মেয়ে মিনহা আলম পহেলা (৭) ও তাবহা আলম উর্মী (৪)।

রোজিনার ভাই ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, বোনদের মধ্যে রোজিনা সবার ছোট ছিলো। সবার আদরের ছিলো। যে যা চাইতো কখনো না করেনি। নিজে না খেয়ে হলেও অন্যকে খাওয়াতো।

তিনি বলেন, শাকিল ভাগনে হওয়ায় রোজিনার স্বামীর মাঝেমধ্যে তার কাছে টাকা পাঠাতো। শাকিলের মাঝে-মধ্যে এ বাসায় আসতো। নিয়মিত যাতায়াত ছিলো কিনা জানি না।

রোজিনার স্বামীর পাঠানো টাকা অনেকবারই আত্মসাৎ করেছে শাকিল। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে রোজিনা ও শাকিলের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিলো। সেই দ্বন্দ্বের জেরেই শাকিল রোজিনাকে হত্যা করতে পারেন বলে জানান ফিরোজ।

হত্যার খবর শুনে রফিকুল আলম চৌধুরীর (রোজিনার স্বামী) বড়ভাই মফিজুল আলম চৌধুরীর স্ত্রী নাজমা প্রথম ঘটনাস্থলে যান।

নাজমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি গিয়ে বাসার বাথরুমে রোজিনার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। মেয়ে দুইটা আমাকে মা বলেই ডাকে। ছোট মেয়েটাতো কিছু বোঝে না। কিন্তু বড় মেয়েটা বলে, ‘মা আম্মুর কী হয়েছে?’ এতো সুন্দর দুইটা শিশুকে আমি কী জবাব দেব?

তিনি আরও বলেন, সম্পর্কে জা হলেও আমি কখনো রোজিনার বাসায় আসিনি। শাকিল রোজিনার বাসায় যাতায়াত করতো কি না জানি না।

নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদনে হাফিজ আহমেদ উল্লেখ করেন, রোজিনার গলা থেকে ঘাড় পর্যন্ত গভীর কাটা হয়েছে। থুতনি ও কানের পেছনেও কাটা দাগ রয়েছে। দুই পায়ের হাঁটুর পেছনে ও হাতের কব্জির ওপরে কাটা চিহ্ন রয়েছে।

এসআই হাফিজ বলেন, বড় মেয়ের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সকালে দরজায় কেউ নক করে। পরে বড় মেয়ে দরজা খুলে দিলে শাকিল ঘরে প্রবেশ করে রান্না ঘর থেকে ছুরি আনে। তারপর রোজিনাকে টেনে বাথরুমে নিয়ে যায়। সেখানে দুই সন্তানের সামনেই রোজিনাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় শাকিল।

পরে মেয়েদের চিৎকারে পাশের প্রতিবেশীরা এসে পুলিশে খবর দেন। খবর শুনে পুলিশ  বাথরুম থেকে বোরখা পড়া অবস্থায় রোজিনার মরদেহ উদ্ধার করে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী লেনদেনের বিষয়টি মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
পিএম/ওএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।