ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাটি ও বাঁশের তৈরি দোতলা স্কুল

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
মাটি ও বাঁশের তৈরি দোতলা স্কুল মাটি ও বাঁশের তৈরি দোতলা স্কুল। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়নের রুদ্রাপুর গ্রামে প্রায় এক যুগ আগে সরকারি বা বেসরকারি কোনো স্কুল ছিলো না।

এ গ্রামের শিশু-কিশোরদের ছয় থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। গ্রামটিতে একটি স্কুলের অভাবে এখানকার শিশু-কিশোররা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিলো।

স্কুলের দূরত্বের কারণে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কৃষি বা অন্য কাজ নেমে পড়তেন। মাটি ও বাঁশের তৈরি দোতলা স্কুল।                                          ছবি: বাংলানিউজগ্রামটির এ চিত্র পরিবর্তন করতে শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে দীপশিখা নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রুদ্রাপুর গ্রামে ছোট পরিসরে দীপশিখা নামে একটি স্কুল গড়ে তোলে গ্রামটিতে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় বছর পর জার্মানির শান্তি দাতা সংস্থার অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার লিজ ইউনিভার্সিটির ১০ জন শিক্ষার্থী ১৯ জন শ্রমিক কয়েক মাস মাটি ও বাঁশ দিয়ে স্কুলটিকে দোতলা করে। এ স্কুলটির কারণে রুদ্রাপুর গ্রামটি পরিচিত দেশের বিভিন্ন মানুষের কাছে।

দীপশিখা স্কুলের প্রধান শিক্ষক কল্পনা রায় বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, খড়, বালু ও বাঁশ, দড়ি, কাঠ, টিন, রড, ইট ও সিমেন্ট। মাটি-খড় মেশানো কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রতিটি দেয়াল। এছাড়া বৃষ্টির পানি দেয়ালে লাগলে খড়ের জন্য পানি নিচে গড়িয়ে পরে। দেয়ালের ভেতরে উপর দেওয়া হয়েছে আর্দ্রতারোধক, যা মাটির নিচের আর্দ্রতা বজায় রাখে।

দেয়ালের প্লাস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি ও বালু। মেঝেতে প্লাস্টারের জন্য পামওয়েল ও সাবানের পেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণভাবে ওয়াটারপ্রুফ। মাটি ও বাঁশের তৈরি দোতলা স্কুল।  ছবি: বাংলানিউজবাইরে থেকে প্লাস্টার না করায় স্বাভাবিকভাবে উপকরণগুলো চোখে পড়ার মতো। স্কুলটি ৯ ফুট উচ্চতার উপরে প্রথম তলায় ছাদ হিসেবে বাঁশের পাটাতন দেওয়া হয়েছে। এরপর বাঁশের উপর চাটাই ও মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছাদ। ১০ ফুট উচ্চতার উপরে দোতলার ছাদে বাঁশের সঙ্গে কাঠ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপরে টিন ব্যবহার করা হয়েছে। ইট দিয়ে করা হয়েছে মেঝে। দোতলায় যাওয়ার জন্য বাঁশ দিয়ে সিঁড়ি বানানো হয়েছে।

স্কুলের মোট আয়তন ৮ হাজার বর্গফুট। স্কুলটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৭ লাখ টাকা।

তিনি আরো বলেন, ইট-সিমেন্ট দিয়ে এমন একটি বিল্ডিং তৈরি করতে ব্যয় হবে ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। এছাড়া স্কুলটির ভেতরে রয়েছে শীতের দিনে গরম ও গরমের দিনে ঠান্ডার ব্যবস্থা। মাটি ও বাঁশের তৈরি দোতলা স্কুল।  ছবি: বাংলানিউজস্কুলটি শিক্ষকা সাহেদা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান, শিক্ষার প্রতি স্থায়ী ও ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি, দলগত ভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।

বর্তমানে এ স্কুলে শিশুশ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান দেওয়া হয়।

এখানে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি নাচ, গান, অভিনয়-চিত্রাঙ্কন, ও ইংরেজি ভাষা শেখানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।