ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দালালদের নিয়ন্ত্রণে রাতের খুমেক! 

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
দালালদের নিয়ন্ত্রণে রাতের খুমেক!  দালালদের নিয়ন্ত্রণে রাতের খুমেক! / মানজারুল ইসলাম

খুমেক থেকে: রাত গভীরের সঙ্গে সঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) জেঁকে বসে দালাল চক্র। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফার্মেসি, প্যাথলজি, ক্লিনিক ও অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দেওয়ার নামে এসব দালালরা নিরীহ মানুষকে ঠকাচ্ছেন। 

খুমেকে জরুরি বিভাগ থেকে রোগীর বেড, ফার্মেসি, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস থেকে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা— সর্বত্র দালালচক্রের একছত্র নিয়ন্ত্রণ বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।  

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টার দিকে সেই চক্রের খপ্পরে পড়ে নগরীর বটিয়াঘাটার জয়খালী এলাকার বাসিন্দা আসমা খাতুনের স্বজনদের পকেট থেকে বেরিয়ে গেছে দুই হাজার ৭শ টাকা।

 

আসমা খাতুনের স্বজনরা বাংলানিউজকে বলেন, রাতে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে অসুস্থ হলে আসমাকে ভর্তি করা হয়েছে খুমেকে। এসেই সরকারি এই হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক তিনটি এক্স-রে ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য ব্যবস্থাপত্র দিলেন। তবে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে ১৫০ টাকার বিনিময়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ছাড়া অন্য তিনটি এক্স-রে করতে হলো বাইরের বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে। কিন্তু ব্যবস্থাপত্র নিয়ে এক ব্যক্তি হাঁটা শুরু করেন। তিনি একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। তার কথা মতো সেখান থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে বিল হয় দুই হাজার ৭শ টাকা। পরে আমরা অন্য ক্লিনিকে খবর নিয়ে জেনেছি, এগুলো করতে সর্বোচ্চ হাজার খানেক টাকা খরচ হয়।  

শুধু আসমা বেগম নন, রাতে হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিভাগ বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে বুক ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাতক্ষীরার আশাশুনির তৌফিক মোড়ল, ডুমুরিয়ার সাহাপুর এলাকার আতিয়ার সর্দার, খুলনা নগরীর নিউমার্কেট এলাকার স্ট্রোকের রোগী মিনতী রায়সহ অনেকেই হাসপাতালের গেটে অপেক্ষমাণ দালালদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন বাইরের বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে। এতে সরকারি খরচের তুলনায় অন্তত চারগুণ অর্থ বেশি গুনতে হলো।  

এছাড়াও হাসপাতাল গেটে অপেক্ষমাণ ওষুধ ফার্মেসির দালালদের খপ্পরে পড়ে বিপদের মুহূর্তেও ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা।  

খুলনার ডুমুরিয়া মিকশিমিল থেকে আসা আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে জানান, তার চাচা খবির মোড়ল অসুস্থ হলে রাতেই খুমেকে ভর্তি করা হয়। এসময় জরুরি বিভাগে থাকা এক যুবক রহিমা ফার্মেসি নামে একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যান। কোনো সন্দেহ না করেই ওই ফার্মেসি থেকে তিনি তিন হাজার ২শ টাকার ওষুধ কেনেন। তবে কিছু ওষুধ না লাগলে, ভোরে ফেরত দিতে গেলেই বাঁধে বিপত্তি। ওই ফার্মেসির মালিক টিটু শেখ বলেন, ফেরৎ নেওয়া হবে না। যদিও একপর্যায়ে নিলেন কিন্তু ক্রয় মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দাম পেলেন। পরে পরিচিত দোকানে গিয়ে জানতে পারলেন, তিনি ঠকেছেন এক হাজার ৮শ টাকা।  

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে ফার্মেসির দালালদের সিরিয়াল রয়েছে যা সাধারণ মানুষের চোখে পড়বে না। ওই দালালরা প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর বদলে যান। কিন্তু যে যখন সিরিয়ালে থাকবেন ওই সময় নতুন রোগী এলে সেই দালাল তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে নিজের ফার্মেসিতে নিয়ে ঠকাবেন।  

সাধারণত দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীর স্বজনরা বিপদের মুহূর্তে সরল বিশ্বাসে তাদের সঙ্গে গিয়ে যে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছেন সেটা বুঝতে পারেন না, কিন্তু পরে বুঝেও কাজে আসে না।  

একাধিক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শত শত রোগীকে রাত হলেই এমন নানাভাবে গুনতে হয় বাড়তি অর্থ। কোনো কোনো সময় তা হয়ে যায় মাত্রা ছাড়া।  

লোগো

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
ইউজি/এসএনএস

আরও পড়ুন
** রাতের খুমেকের ‘কন্ট্রাক্ট সার্ভিস’ প্রতারণা! 
** জীবনচক্র তাদের আহ্নিক গতির পাল্টাসূত্রে​
** আলোকচিত্রে রাতের খুলনা
** কদমতলা বাজারে রাতের কর্মযজ্ঞ যোগায় দিনের খোরাক
** রাতের খুলনার খানাপিনা
** রাতদুপুরে অক্সিজেনই মৃত্যুফাঁদ খুমেকের
** রাত ১০টার পর সন্ধ্যা নামে কুয়েটের হলে!
** ভূতের বাড়ি থেকে ভেসে আসে শীলার হাসি-কান্না!
** রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম যখন ঘুমরাজ্য!
** আড্ডা জাগিয়ে রাখে খুলনার সাতরাস্তা মোড়
** চোখ রাখুন খুলনার রাতে

    

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।