ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মহাসড়ক দখল করে বাস টার্মিনাল!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
মহাসড়ক দখল করে বাস টার্মিনাল! মহাসড়ক দখল করে বাস টার্মিনাল-ছবি-আরিফ জাহান

শেরপুর (বগুড়া) ঘুরে: ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরের ধুনট মোড় থেকে আহলে হাদিস পার্ক মসজিদ পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক। সড়কের মাঝখানে রয়েছে ডিভাইডার। মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বের এই সড়কটুকুর মাঝে পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন তিনটি বাস টার্মিনাল রয়েছে।

কিন্তু মহাসড়কে চলাচলকারী স্থানীয় ও দূরপাল্লার কোনো বাসই এসব টার্মিনালে প্রবেশ করে না। বিশেষ করে স্থানীয় রুটে চলাচলকারী করতোয়া গেটলক সার্ভিসসহ অন্যসব বাস ভোর থেকেই শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের ওপর অবস্থান নেয়।

সেখানেই গভীর রাত পর্যন্ত চলে যাত্রী বহনের কার্যক্রম।

সব মিলিয়ে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কেই বাস টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করছেন মালিক- শ্রমিকরা। এতে শহরএলাকায় প্রায়শই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। চলাচলে অসহ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারীরা। ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া প্রায়ই ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
এসব দেখেও না দেখার ভান করে আছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি অভিযোগ আছে, সংশ্লিষ্টরা অনৈতিক সুবিধার বিনিময়েই মহাসড়ককে ‘খেয়াল খুশির উন্মুক্ত টার্মিনাল’ হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছেন।  

মহাসড়ক দখল করে বাস টার্মিনাল-ছবি-আরিফ জাহানমঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের এই এলাকা ঘুরে এমন নৈরাজ্যকর দৃশ্যই দেখা গেল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের পশ্চিম পাশে আছে সাবেক ‘রঙ্গিলা’ সিনেমাহলের ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থান। স্থানটি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শেরপুর-বগুড়া রুটে চলাচলকারী করতোয়া গেটলক সার্ভিসের বাসগুলো টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

কিন্তু রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বাসগুলো টার্মিনালের ভেতর রাখা হয় না। প্রতিদিন ভোর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত বাসগুলো সাবেক রঙ্গিলা সিনেমা হলের সামনে মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে যাত্রী আনা নেওয়া করে থাকে।

যাত্রী ওঠানোর জন্য মহাসড়কের ওপর তিন বা দুই সারি করে পাকিং করে রাখা হয় করতোয়া গেটলক সার্ভিসের বাসগুলো। প্রত্যহ ভোর থেকে ১০-১২টি করে বাস মহাসড়ক দখল করে এভাবে রাখা হয়।

এর সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় ধুনট উপজেলার গোঁসাইবাড়ী-বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নগরবাড়ীসহ দুরপাল্লার বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বাসগুলো। মহাসড়কের এই স্থানকে টার্মিনাল বানিয়ে যাত্রী ওঠানো ও নামানো হয়।

দিন ও রাতের একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে মহাসড়কের এই স্থানকে টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন বাসমালিক-শ্রমিকরা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে মহাসড়ক দখল করে দীর্ঘদিন এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি বাসমালিক-শ্রমিকরা মহাসড়ক দখলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।  

মহাসড়ক দখল করে বাস টার্মিনাল-ছবি-আরিফ জাহানসোহেল রানা, আবদুল্লাহ আল মামুন, আইয়ুব আলীসহ একাধিক ভুক্তভোগী ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে জানান, মহাসড়ক যানবাহন ও মানুষ চলাচলের জন্য। কিন্তু মহাসড়ক দখল করে টার্মিনাল বানানো হয়েছে। এতে করে দিনের সিংহভাগ সময় শহর এলাকায় তীব্র যানজট লেগেই আছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসবের প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষ কিছু বললে শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ এসব ব্যক্তিদের।
জেলা মোটরমালিক সমিতির শেরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বাসগুলো রাখার জন্য ভাড়ায় টার্মিনাল নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন যেন কিছু বাস মহাসড়কের ওপর রাখা হয়।

মহাসড়কের ওপর বাস না রাখতে মালিক-শ্রমিকদের বারবার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছু মালিক ও শ্রমিকনেতা সেই নির্দেশনা মানছেন না। এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান এই মালিকনেতা।  

শহরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মহাসড়ক যান চলাচলের জন্য। মহাসড়ককে বাস টার্মিনাল বানানোর কোনো এক্তিয়ার নেই। খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।