ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাত ১০টার পর সন্ধ্যা নামে কুয়েটের হলে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
রাত ১০টার পর সন্ধ্যা নামে কুয়েটের হলে! খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)/ছবি: মুন্না-বাংলানিউজ

খুলনা: কর্মমুখর মানুষগুলো নীড়ে ফিরতে শুরু করে সবশেষ আলো যখন অন্ধকারে রূপ নেয়। ঠিক তখনই খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হন মুক্ত আকাশের নিচে নিশ্বাস নিতে।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টায় কুয়েটের খান জাহান আলী হলের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মো. মাহমুদুল হাসান বলছিলেন এভাবেই।

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্লাস ও ল্যাব শেষ করে হলে ফিরে বিশ্রাম নেওয়ার কথা হলেও আয়েশে সমর্পণ করেন না নিজেকে।

কেউ ছোটেন টিউশনিতে। কেউ শহরের রেস্টুরেন্ট, কেউবা যান ঘুরতে। কখনও ভৈরবের পাড় তো কখনও রূপসা।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)/ছবি: মুন্না-বাংলানিউজ
হাসান বলছিলেন, প্রকৃতপক্ষে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা হয় রাত ১০টার পর থেকে। পাখিরা যেমন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে, তেমনি এখানের শিক্ষার্থীরা রাত ১০টার পর থেকে আস্তে আস্তে হলে ফিরতে শুরু করেন। তবে বিশেষ কিছু রাত যেমন মাসিক ফিস্ট, অ্যানুয়াল ফিস্টের রাতগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকেই হলগুলোতে জমে ওঠে আড্ডা।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আড্ডা/ছবি: মুন্না-বাংলানিউজসরেজমিনে দেখা যায়, রাতের কুয়েট যেন খুলনা শহরের এক অচেনা নগরী। লাল-নীল বর্ণিল বাতিতে সজ্জিত পুরো ক্যাম্পাস। তবে হলের রুমগুলোতে চলছে যেনো রাত উদযাপন। কেউ ব্যস্ত ল্যাব রিপোর্ট লেখায়, কেউ অ্যাসাইনমেন্ট তৈরিতে, কেউ প্রজেক্ট তৈরি, কেউ আবার ক্লাস টেস্টের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো রুমে আবার চলছে মুভি দেখা, কার্ড খেলা অথবা গিটারের তারে বেজে উঠছে সুরেলা কণ্ঠ।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় (কুয়েট)/ছবি: মুন্না-বাংলানিউজদলবেঁধে ক্যাম্পাসের চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডা দেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। আর কেউ সারাদিনের ক্লান্তির সঙ্গে পরাজিত হয়ে বিছানায় ঘুমে। বেশির ভাগ রুমের বাতি নিভবে রাত ২টার পর থেকে।

কুয়েটের একমাত্র ছাত্রী হল বেগম রোকেয়া হল। ছেলেদের হলগুলোর তুলনায় এ হলও ব্যতিক্রম নয়। তবে এখানে ছাত্রীদের রাত ৯টার মধ্যে হলে ফিরতে হয়।

রোকেয়া হলের চতুর্থ বর্ষের বিদায়ী ছাত্রী শারমিনা রহমান বুশরা জানান, রাতে মেয়েরা সাজসজ্জা ও রূপচর্চা নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত থাকে, কেউবা রান্নার রেসিপি চর্চা আর প্রিয় বান্ধবীর জন্য গিফট বানানো রোকেয়া হলের ছাত্রীদের একটি ঐতিহ্য।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়//ছবি: মুন্না-বাংলানিউজছেলেদের হলগুলোর মধ্যে আছে খান জাহান আলী হল, ড. এম এ রশিদ হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হক হল, অমর একুশে হল ও লালন শাহ হল। হলগুলোর দৃশ্য বরাবরই একই। তবে গভীর রাতে দুর্বার বাংলার সামনের গানের আড্ডা আর সেন্ট্রাল মাঠ থেকে ধেয়ে আসা গানের কথাগুলো ধীরে ধীরে দূরে হারিয়ে যায়।

খান জাহান আলী হলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান রেহমান বাংলানিউজকে বলেন, আসলে কুয়েটে প্রতিটি রাত যেমন তেমন হোক না কেন বৃহস্পতিবারের রাতটি আমাদের জন্য স্পেশাল। প্রতি সপ্তাহে আমরা এ রাতটির জন্য অপেক্ষা করি। এ দিন ক্লাস শেষে দলবেঁধে বন্ধুরা মিলে শহরে খেতে যাই। রাত কেটে যায় কার্ড খেলে অথবা ইংলিশ টিভি সিরিয়াল, কোরিয়ান মুভি দেখে। আর যদি ঐ রাতে কোনো এল-ক্ল্যাসিকো অথবা বাংলাদেশের খেলা থাকে, তবে সেটা আমাদের জন্য ঈদের রাতের মতোই মনে হয়!

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)/ছবি: মুন্না-বাংলানিউজরাতের কুয়েট দেখতে অসম্ভব সুন্দর। ঢুকতেই নজরকাড়া মেইন গেট, তার সামনে হলিউড স্টাইলে লেখা KUET যে সবার মন জয় করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এতো ব্যস্ততা ও সৌন্দর্যের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা সারাদিন ক্লাস, ল্যাব করে ও রাতে ল্যাব রিপোর্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্টের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে সত্যিই যান্ত্রিক হয়ে ওঠে। এই যান্ত্রিকতা এসে ভাঙে সপ্তাহ শেষের শুক্র আর শনিবার।
লোগো
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ