ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভূতের বাড়ি থেকে ভেসে আসে শীলার হাসি-কান্না!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
ভূতের বাড়ি থেকে ভেসে আসে শীলার হাসি-কান্না! ভূতের বাড়ি/ছবি ও ভিডিও: মানজারুল ইসলাম-বাংলানিউজ

খুলনা: মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) গভীর রাত। সুনসান নীরবতা। কুকুরগুলোও যেনো গভীর ঘুমে। কেবল ঘুমায়নি দূরের ল্যাম্পপোস্টগুলো! খান জাহান আলী সড়কে কর্কশ শব্দ করে একটি ট্রাক শুধু দ্রুত গতিতে ছুটে গেলো রূপসার দিকে। মধ্যরাতে দুরু দুরু বুকে খুলনা আলিয়া মাদ্রাসার বিপরীতের বাহাদুর লেনে। গা ছমছমে পরিবেশ। ২০-৩০ কদম হেঁটে পশ্চিম দিকে তাকালেই বিশাল একটি পুকুর। পুকুরের খানিকটা দূরে রহস্যঘেরা বাড়ি!

বাহাদুর লেন নাম হলেও এ গলিটিকে সবাই ভূতের গলি বলেই চেনে, আর বাড়িটিকে ভ‍ূতের বাড়ি।

এ গলিতে নতুন, পুরাতন অনেক বাড়ি থাকলেও অন্ধকারে ডুবে আছে ভেতরটা।

গলির শেষ মাথা পর্যন্ত যেনো নিস্তব্ধতা। হেঁটে যেতেই গাছের একটি পাতা নাড়িয়ে দিলো চুলের গোড়া থেকে পায়ের নখ! ভূত নয় তো! রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে আচানক কোনো শব্দেও কেঁপে ওঠে বুক।

ভূতের বাড়ি/ছবি: মানজারুল ইসলাম-বাংলানিউজগলি দিয়ে এবার বাড়ির কাছাকাছি। ভূতের বাড়িটি আসলে এখন আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্টের কার্যালয়। তাই চারিদিকে দেওয়াল দিয়ে নিরাপত্তায় ঘেরা। তাই ভয় উপেক্ষা করে অজানা কোনো ভূতের সংস্পর্শে যাওয়া হলো না সহসা। যদিও ভূত বলে কিছু আছে কিনা তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এখানে প্রশ্নাতীত।

ফিরে আসতে হলো আনসার ক্যাম্পের গেটে। গেট দিয়ে প্রবেশ করেই অনুমতি নিয়ে ভূতের বাড়ির দিকে পা বাড়ানো। কয়েক পা হাঁটলেই দক্ষিণ দিকে পুরনো দোতলা ভবন (ভূতের বাড়ি)। বাইরে আলো থাকলেও ভেতরটা ঝিমধরা অন্ধকার।

ভূতের বাড়ি/ছবি: মানজারুল ইসলাম-বাংলানিউজভূত না থাকলেও মানুষ আছে সেখানে। সবাই আনসার সদস্য। ভূতের বদলে তাই আড্ডা হলো তাদের সঙ্গেই। খুলনা শহরের সবচেয়ে বড় টুটপাড়া কবরখানার পাশে হওয়ায় ভূত না থাকলেও ভূতের বাড়ির চারপাশ ঘুরতে ভয় যেনো একটু চেপেই ধরে।

ষাটের দশকে এই ভূতের বাড়িতে খুলনা জেলা আনসার কার্যালয় করা হয়। তখন এটি সংস্কার করা হয়েছিল। এক পর্যায়ে এ বাড়ির পাশে নতুন অফিস ভবন তৈরি হয়। তখন ভূতের বাড়ি থেকে অফিসটি স্থানান্তরিত করা হয় বলে জানান আনসার সদস্যরা।  

ভূতের বাড়ি/ছবি: মানজারুল ইসলাম-বাংলানিউজএ বাড়ির ইতিহাস নিয়ে নানারকম জনশ্রুতি রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা করার জন্য জামায়াত নেতা মাওলানা এ কে এম ইউসুফ এ বাড়িতে নয়টি নির্যাতন সেল সরাসরি তদারকি করতেন। এ নয়টি টর্চার সেলে পাকিস্তানি বাহিনী ছাড়াও রাজাকার বাহিনীর ৯৬ জন জামায়াতের ক্যাডার নির্যাতন করতো মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষের ওপর।

ভূতের বাড়ি/ছবি: মানজারুল ইসলাম-বাংলানিউজ২০১৫ সালে আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্টের কার্যালয়ের সীমানার বাইরে খুলনায় একাত্তরের প্রথম রাজাকার ক্যাম্পের পরিচিতিমূলক ফলক স্থাপন করা হয়।

এছাড়া জনশ্রুতি রয়েছে নাটোরের দীঘাপতিয়া রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দয়ারাম ১৭১৪ সালে খুলনা ও যশোরের অনেক জমি দখল করেন। আর রাজা দয়ারামের বোনের মেয়ে ছিলেন শীলা। শীলা খুবই সুন্দরী ছিলেন। তার মামাবাড়িতে অবস্থানকালে রাজবাড়িতে অনুষ্ঠিত যাত্রা দেখতে গিয়ে অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েন নিশিকান্ত নামের এক যাত্রাশিল্পীর। গোপনে তারা অভিসারে বের হতেন। এমনই চলতে থাকে।

একদিন তারা পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ধরা পড়ে যান দয়ারামের কর্মচারীর কাছে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে দায়ারাম শীলাকে বিয়ে দেন নিধুরাম নামে এক যুবকের সঙ্গে। একপর্যায় তাদের খুলনায় পাঠিয়ে দেন এবং আশ্রয় হয় এই বাড়িতে। শীলা এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। নিধুরামকে কখনও স্পর্শও করতে দেননি। একসময়ে শীলা আত্মহত্যা করেন। একই সময় নিধুরামও। সেই থেকে কখনও নারীকণ্ঠে হাসির শব্দ, আবার কখনও ছায়ামূর্তি দেখা যায় এ বাড়িতে। আর এখান থেকেই ভৌতিক গল্পের শুরু।
ভূতের বাড়ি/ছবি: মানজারুল ইসলাম-বাংলানিউজ
আবার কারও কারও মতে, বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন জনৈক দীননাথ সিংহ। তিনি ছিলেন কুখ্যাত নীলকর উইলিয়াম রেনির অন্যতম সহযোগী। পাকিস্তান আমলে জনৈক মোক্তার এ বাড়িতে বসবাস করতে আসেন। তার এক ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাড়িতে মারা যান। এরপর গোলাম জব্বার নামের এক ডাক্তার এ বাড়িতে বাস করতে এলে তার এক চাকরও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সাধারণ লোকের ধারণা, এগুলো সব নাকি ভূতের কাজ।

এ বাড়িটিতে এতো ঘটনা ঘটে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে ভবনটি ভীতিকর ও রহস্যময়। ভয়ের হলেও ভূত নিয়ে কৌতূহলী অনেকেই এ বাড়িটি দেখতে আসেন বলে জানান আনসার ক্যাম্পে রাতে দায়িত্বরত আনসার সদস্য আব্দুল মতিন।  

আপনি নিজে ভূত দেখেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি হেসে উড়িয়ে দেন।                

লোগো
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
এমআরএম/এএ

**জীবনচক্র তাদের আহ্নিক গতির পাল্টাসূত্রে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।