ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আড্ডা জাগিয়ে রাখে খুলনার সাতরাস্তা মোড়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
আড্ডা জাগিয়ে রাখে খুলনার সাতরাস্তা মোড় বটতলার আড্ডা/ছবি ও ভিডিও: মানজারুল ইসলাম

খুলনা: কেটলিতে টগবগিয়ে ফুটছে গরম পানি। জটলা পাকিয়ে বসে আছেন ২৫-৩০ জন আড্ডাবাজ। বসার জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ আছেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে। বেলালের চায়ের দোকানে গরুর খাঁটি দুধের চায়ের অপেক্ষা সবার।

চা পানের ফাঁকে ফাঁকে জমে উঠছে আড্ডা। খোশ গল্পে মশগুল।

এক কাপ শেষ হতেই অর্ডার আরেক কাপের। আড্ডা যে পুরোয় না! একদলের আড্ডা শেষ হতে না হতেই যোগ হয় আরেক দলের। চায়ের পর কেউ আবার পান-বিড়ি নিয়ে আড্ডা জমাচ্ছেন সামনের ডা. মিলন চত্বরের বট তলায়। রাত বাড়ছে তাতে কি! আড্ডার ফাঁকে ক্ষুধা লাগলে রেস্টুরেন্ট তো আছেই।

এ মোড়ের বেলালের চা, বিখ্যাত ছাঁচি পান, শামীমের চুইঝাল দিয়ে গরু ও খাসির মাংস, খিচুড়ি, আর চায়ের কাপে ঝড় তোলা আড্ডায় যে জীবনে একবারের জন্যও গা ভাসিয়েছে তার পক্ষে ভোলা অসম্ভব!
সাত রাস্তার আড্ডা/ছবি: মানজার-বাংলানিউজ
মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টায় মহানগরীর সাত রাস্তার মোড়ের বটতলায় বেশ কয়েকজন আড্ডাবাজের সঙ্গে কথা হয়। তাদের অভিব্যক্তি ছিলো এমন। এখানে প্রতি রাতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও আসেন আড্ডা দিতে।

আড্ডায় মগ্ন এনজিও কর্মকর্তা জুয়েল শেখ বলেন, একটি নির্মল ও নির্ভেজাল আড্ডার স্থান এটি। সারা রাত আড্ডা দিলেও এখানে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। যে কারণে আড্ডাবাজদের পদচারণায় সন্ধ্যা নামতেই অন্য চেহারা পায় এ চত্বর।

পাট ব্যবসায়ী মো. সরফরাজ বলেন, বন্ধুদের নিয়ে এখানে আসাটা রীতিমতো নেশায় পরিণত হয়েছে। এখানে না এলে রাতে যেন ঘুম হয় না!

‘এখানে আড্ডা দিয়ে শুধু সময়ই কাটানো হয় না, আড্ডা থেকে অনেক সময় অনেক কিছু জানা যায়, শেখাও যায়। মেসের অনেক বন্ধু এসে এখানে বসে অ্যাডভেঞ্চার, রোমান্স, সমসাময়িক প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সিরিয়াস, হালকা বিষয় সবই আলোচিত হয় আড্ডার আসরে। কেউ কেউ কৌতুক ও চুটকি বলেও আড্ডা জমিয়ে রাখেন। বলছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম।
সাত রাস্তার আড্ডা/ছবি: মানজার-বাংলানিউজ
ফাহিমের সঙ্গে আড্ডা দিতে আসা তার বন্ধু আজাদ বলেন, নির্ভেজাল আড্ডার খাতিরে একটু দূর হলেও ছুটে আসি। এখানে গল্প করি, প্রাণ খুলে হাসি।

মহানগরীর সাত রাস্তার মোড় থেকে রয়্যালের মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০-১৫টি স্থানে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। ফাস্টফুডের দোকান, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকান, কফি শপ, যাত্রী ছাউনি, বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের সামনেও আড্ডা কম জমে না।

সাত রাস্তার মোড়ের শামীম হোটেলের মালিক শামীম বলেন, নিতান্তই নিরস ও নিরামিষ লোক ছাড়া খুলনার সব বয়সের মানুষই আসেন এখানে আড্ডা দিতে। খুলনায় বেড়াতে এলেও অনেকে আসেন এখানে।

নিয়মিত আড্ডা দিতে আসা স্থানীয় দৈনিক খুলনাঞ্চলের সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলটন বাংলানিউজকে বলেন, সাত রাস্তার মোড়ে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ীরাই নন, এখানে আড্ডা দেন সাংবাদিক থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। এখানে কবি, শিল্পী, গীতিকার ও সুরকাররাও আসেন।

হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল, খুলনা সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ, হোটেল ক্যাসল সালাম, কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের বুথ, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালসহ ঢাকাগামী সব পরিবহনের কাউন্টার এখানে থাকার কারণে ২৪ ঘণ্টাই লোক সমাগম থাকে। তবে রাতে মানুষের লোক সমাগম কম হয়।
 লোগো
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।