ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

উৎসবের রঙ নেই কৃষকের ঘরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
উৎসবের রঙ নেই কৃষকের ঘরে উৎসবের রঙ নেই কৃষকের ঘরে-ছবি-অনিক খান

ময়মনসিংহ: নতুন উদ্দীপনা আর সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে বৈশাখ। উৎসব-আনন্দের অবগাহনে মাতোয়ারা গোটা দেশ। কিন্তু উৎসবের সেই রঙ নেই কৃষকের ঘরে। 

ধান কাটা উৎসব এখনও শুরু হতে ঢের সময় বাকি। উঠানজুড়ে নেই ধান মাড়াই।

নেই পাকা ধানের মাতাল ঘ্রাণ। মুড়ি-মুড়কি কিংবা হাওয়াই মিঠাইয়ের চলনও যেনো উঠে গেছে।  

তাদের কাছে পহেলা বৈশাখ অন্য দিনের মতোই সাধারণ। এ নিয়ে মাঠের নায়ক কৃষকের ঘরে নেই কোনো বিশেষ আয়োজন।  

তবে শুকনো মরিচ আর লবণ চটকিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার সংস্কৃতিটা এখনও লালন করে আসছেন বাঙালির চিরন্তন সংস্কৃতির ধারক-বাহক কৃষকরা।  

শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া উত্তরপাড়া, লাহেড়িপাড়া, লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেলো এমন চিত্র।  

নবীন সূর্যের আলতো ছোঁয়া আর জীর্ণশীর্ণ পুরনোকে বিদায় জানিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়ছে গ্রামগঞ্জও। মৃদুমন্দ বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ।  

রঙের আভা ছড়িয়ে তারুণ্যের জোয়ারে নাচে-গানে-বাদ্যের সঙ্গে কোনো সংস্পর্শ নেই অবহেলিত গ্রামগুলোর।  

অথচ এসব গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরের উপজেলা সদরেই লোকজ বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। কিন্তু এ বিষয়টিও অজানা স্থানীয় জোরবাড়িয়া উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক হারান চন্দ্র দেবনাথের।  

পঞ্চাশের ঘরে তার বয়স। শৈশবে তার কাছে বৈশাখ মানেই ছিলো প্রাণের উচ্ছ্বাস।  

বয়সের ভার আর আর্থিক দৈন্যতা কেড়ে নিয়েছে তার বৈশাখের আনন্দ। বলছিলেন, কৃষকের কোনো বৈশাখ নেই। এখন আমাদের গ্রামে ধান কাটা শুরু হয় বৈশাখের শেষ দিকে। তখন নতুন ধান ঘরে উঠবে। আনন্দে বিভোর হয়ে উঠবে মন।  

বৈশাখের সকালে কী খাবার খেয়েছেন প্রশ্ন করতেই উত্তর দিলেন, মাটির সানকিতে পান্তা ভাতে শুকনো মরিচ আর লবণ চটকিয়ে খাওয়ার মজাটাই আলাদা।  

বছরের প্রতিটি দিনেই আমরা এমন খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। এর সঙ্গে দুপুরের খাবারে যোগ হবে পাটের শাক ও শুকনো মরিচ ভাজা।  

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে আবহমান কালের এক সাংস্কৃতিক উৎসব। অতীত পেছনে ফেলে ভবিষ্যত সমৃদ্ধের টানে মাঠের আসল নায়ক কৃষকদের ছাড়া ছুটে যাওয়া সম্ভব নয় বলছিলেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুহুল আমিন।  

তার সঙ্গে আলাপের সময়েই এগিয়ে এলেন স্থানীয় লাহেড়িপাড়ার কৃষক সোলায়মান ফকির। তার বয়স চল্লিশ। প্রথমেই তিনি বলেন, গরিব কৃষকের আবার বৈশাখ কীসের?

বৈশাখে ইলিশ-পান্তার স্বাদ নিয়েছেন কখনও? উত্তরে বলেন, ইলিশ তো আমাদের খাবার নয়। ওটা তো ওপরতলার মানুষদের খাবার।  

স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, এক সময় আমরাও ইলিশ-পান্তা খেতাম। বাবা বাজার থেকে ইলিশ কিনে আনতেন।  

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সংসারের সেই স্বচ্ছলতা তার নেই। ইলিশ-পান্তার চিন্তা এখন শুধুই যেনো বিলাসিতা এ কৃষকের কাছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭ 
এমএএএম/আরআর/এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad